বিশ্বনাথে মাছ চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা রুবা খানম
মশিউর রহমান, বিশ্বনাথ (সিলেট) : নিজের একান্ত শখ থেকে ২০১২ সালে বাড়ির পুকুরে মাছচাষ শুরু করেন সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার রামধানা গ্রামের প্রবাসী আফিয়া খানম। একটু পরিশ্রমে তিনি পান ব্যাপক সফলতা। এ সফলতার কারণে পরের বছর থেকেই শুরু করেন বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ। এখানেও সফলতা তিনি পান। এরপর থেমে না থেকে মাছচাষের পাশাপাশি শুরু করেন সবজি চাষ। সফলতা তার সঙ্গি হওয়ায় তাতেও সফল হন আফিয়া খানম।
২০১৪ সালে প্রবাসী দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা ও উপজেলার অন্যতম নারী উদ্যোক্তা রুবা খানম মায়ের শুরু করা ‘মাছ ও সবজি’ চাষের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। মায়ের মতো রুবা খানমও মাছচাষে পেতে শুরু করেন একের পর এক সফলতা। এর ফলশ্রুতিতে মাছচাষে সফলতা হিসেবে ২০১৫ সালে উপজেলা পর্যায়ে ও ২০১৬ সালে জেলা পর্যায়ে ‘সফল সম্বনিত মাছচাষ উৎপাদনকারী’ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পান ‘আফিয়া খানম ফিসারিজ’র সত্ত্বাধিকারী রুবা খানম।
রুবা খানমের এই সফলতার খবর শুনে তার নিজের এলাকার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন লাভজনক এ পন্থার সঙ্গে। এতে অর্থনৈতিকভাবে উপজেলার অনেকেই পাচ্ছেন নিজের কর্ম ফলের ওপর নির্ভর করে সফলতা। মাছ ও সবজি চাষে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা আরাও ব্যাপক হারে এগিয়ে আসলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরোও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করেন তরুণী উদ্যোক্তা রুবা খানম। যুক্তরাজ্য প্রবাসী দম্পতি জয়নাল আবেদীন ও আফিয়া খানমের ৬ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের মধ্যে রুবা খানম ষষ্ঠ।
২০১৩ সালে ৬ বিঘা জমিতে ২টি পুকুর করে করে মাছচাষ শুরু করে রুবা খানমের মা আফিয়া খানম প্রথম বছরে আয় করেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। আর ২০১৪ সঙ্গে রুবা খানম দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের ৬ বিঘার সঙ্গে আরোও ৪ বিঘা যোগ করে নতুন আরেকটি পুকুর তৈরী করে শুরু করেন মাছচাষ। বর্তমানে পুকুরগুলোতে যে পরিমাণ মাছ (রুই, কাতলা, কালী বাউস, রাজপুঁটি, দেশীয় শিং-মাগুর-কৈ) রয়েছে যার পরিমান বিক্রি করার সময়ে প্রায় ১২ টনেরও অধিক হবে বলে জানান রুবা খানম।
মাছচাষের পাশাপাশি নিজেদের বাসা-বাড়ি ও পুকুর পাড়’সহ প্রায় ২ বিঘা জমিতে রুবা খানম করেছেন সবজি চাষ। এতে রয়েছে শিম, বর্ষাকালীন টমোটো, নাগা মরিচসহ নানান ধরনের মৌসুম ভিত্তিক সবজি। আর সবজি চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন জৈব পদ্ধতি তৈরী ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ সার। এর পাশাপাশি বাবা জয়নাল আবেদীনের প্রতিষ্ঠিত করা গরুর খামার নিজের দায়িত্বে আনার পর থেকে বছর প্রায় ১ লাখ টাকার দুধ বিক্রি করছেন রুবা খানম। তাঁর খামারে রয়েছে উন্নত মানের ১০টি গরু। এরমধ্যে ৪টি গাভী।
রুবা খানম ফিজারিজের দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪ সালে মাছ বিক্রি থেকে আয় করেন প্রায় ৫ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আয়ের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। সবজি চাষ থেকে প্রতি বছর রুবা খানম’র আয় রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। চলতি বছরে (২০১৬ সালে) পুকুরে থাকা মাছ ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করে সম্ভব হবে বলে আশাবাদি নারী উদ্যোক্তা রুবা খানম।
উপজেলায় সৃষ্ঠমান নারী উদ্যোক্তাদের ও রুবা খানম’র সফলতায় তাঁকে উৎসাহ দিতে ২৩ জুলাই ‘আফিয়া খানম ফিসারিজ’ পরিদর্শন করেন বিশ্বনাথের কৃতিসন্তান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মঈন উদ্দিন। এসময় তিনি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনাও অবমুক্ত করেন।
মায়ের সফলতা দেখে মাছ ও সবজি চাষের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন বলে জানান রুবা খানম। আর ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য তিনি সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করেছেন।