শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে ২৪ মিলিয়ন যাত্রী চলাচল করতে পারবে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : সময়ের পরিবর্তিত চাহিদা পূরণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য জাইকার সাথে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে বছরে এ বন্দর দিয়ে ২৪ মিলিয়ন যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবেন। এই তথ্যগুলো জেলা প্রশাসকদের কাছে প্রকাশ করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেছেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন রচনা ও আগামী দিনের চাহিদা বিবেচনায় সরকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ১৩ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির সমীক্ষার জন্য জাপানের নিপ্পন কোয়েই কোম্পানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের অংশ হিসাবে, জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি অন্যতম এভিয়েশন হাব এবং আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসাবে উন্নীত করতে আমরা কাজ করছি। বেসামরিক বিমান পরিবহনে নিরাপদ, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য এভিয়েশন সুবিধাদি প্রদান এবং দেশের পর্যটন আকর্ষণসমূহ বহুমাত্রিকীকরণ ও উন্নত সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিই আমাদের লক্ষ্য।
২০১৬ পর্যটন বর্ষকে সামনে রেখে আমরা এ শিল্পের প্রসার, প্রচার ও বিপণনের লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলায় নিজস্ব জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য সেøাগানসহ লোগো প্রেরণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, এখন পর্যন্ত ৪০টি জেলা থেকে স্লোগান পাওয়া গেছে, ২৪টি জেলার স্লোগান এখনও পাওয়া যায়নি। ৩৭টি জেলা থেকে লোগা পাওয়া গেছে বাকি আছে ২৭টি জেলা। এখনও যারা স্লোগান ও লোগো পাঠাননি তাদেরকে দ্রুত পাঠাতে অনুরোধ করছি। জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, পর্যটনের ক্ষেত্রে আমাদের নিরন্তর প্রয়াসের স্বীকৃতি আমরা পেতে শুরু করেছি। এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের পর্যটন বিষয়ক সংগঠন ইউএনডব্লিউটিএ এর ২৯তম সিএপি-সিএসএ সম্মেলন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ওআইসির পর্যটন বিষয়ক সম্মেলন ২০১৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও আপনারা জানেন গত বছর ঢাকায় আমরা আন্তর্জাতিক বুদ্ধিস্ট কনফারেন্স আয়োজন করার মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, পর্যটন এখন শুধুমাত্র একটি দেশ ভ্রমণের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। সময়ের পরিবর্তিত চাহিদানুসারে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পর্যটন এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এখন হেলথ ট্যুরিজম, কালচারাল ট্যুরিজম, আর্কিওলজিক্যাল ট্যুরিজম, এডভেঞ্চার ট্যুরিজম, এডুকেশন ট্যুরিজম, মেডিকেল ট্যুরিজম, হালাল ট্যুরিজম, রিলিজিয়াস ট্যুরিজম পর্যটনকে বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা দিয়েছে। তাই টেকসই উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ অপরিহার্য।
ডব্লিউটিটিসির গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন খাতে সম্পৃক্ত। ২০২৬ সালে বাংলাদেশে শুধু এখাতে প্রত্যক্ষভাবেই ১২ লাখ ৫৭ হাজার লোক কাজ করবে। সংস্থাটির মতে, বিশ্বের ১৮৪ টি পর্যটন সমৃদ্ধ দেশের মধ্যে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬০ নম্বরে। দশ বছর পর বাংলাদেশ ১৮তম অবস্থানে চলে আসবে। ফলে জাতীয় আয়ে বড় অবদান রাখবে এ শিল্প।
এ জন্য দরকার পর্যটন শিল্পে দ্রুত বিনিয়োগ। সরকারও চাচ্ছে পিপিপি ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে। অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ইকো-সিস্টেম, আবাসস্থল, মানসম্মত খাদ্য ও ইমেজ বৃদ্ধি করা গেলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প জিডিপিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশের আকাশসীমায় দেশি-বিদেশি উড়োজাহাজের নিরাপদ ও নির্বিঘেœ চলাচলের নিরাপত্তা বিধান এবং বিমান চলাচল সুবিধা সম্প্রসারণই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মূল দায়িত্ব। এ লক্ষ্য পূরণে বিমানবন্দর সমূহের অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
দক্ষিণাঞ্চলের বাণিজ্য ও পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে খান জাহান বিমানবন্দর নির্মাণকে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বন্দরের জন্য ৫৩৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মংলা সমুদ্র বন্দরের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মংলা ইপিজেড এবং মংলা ইকোনমিক জোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে। এ বিমানবন্দরটি বিভাগীয় শহর খুলনা এবং জেলা শহর বাগেরহাট থেকে স্বল্প দূরতের জন্য দুই এলাকার যাত্রীরা এ বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরে সুপরিসর বিমান উড্ডয়ন-অবতরণের লক্ষ্যে ১১৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেট ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে এসফল্ট ওভারলেকরণ এবং রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে রিজিওনাল হাব এ রূপান্তরের লক্ষ্যে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও আমরা ঠাকুরগাঁও এবং শমসের নগর বিমানবন্দর চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের কল্যাণে নিরলস কাজ করছে। আপনারা সরকার ও জনগণের মাঝে সেতুবন্ধ হিসাবে কাজ করছেন। সুতরাং আপনারা বুঝতে পারেন কি ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত। সে ব্যাপারে আপনারা আমাদের পরামর্শ দিবেন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি