উন্নয়নে ব্যয় ৮২ ভাগ ডিএসসিসির ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
ফয়সাল খান: ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। গতকাল দুপুরে নগর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র সাঈদ খোকন। বাজেটে মোট ব্যয়ের প্রায় ৮২ ভাগই উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে। যার প্রায় ৪৩ ভাগ ডিএসসিসির নিজস্ব উৎস থেকে এবং ৫৭ ভাগ সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তামূলক প্রকল্প থেকে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় মেয়র বলেন, জাতীয়ভাবে যেখানে ঘোষিত বাজেটের শতকরা ৬০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়, সেখানে ডিএসসিসি গত বছরের বাজেট ৫১ ভাগ বাস্তবায়ন করেছে। বাজেট অনুমোদন অনুষ্ঠানে চলতি অর্থবছরে ডিএসসিসির মোট ব্যায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছর ছিল ২ হাজার ৮৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এসময় গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত এই বাজেট সংশোধন করে ১ হাজার ৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
ডিএসসিসির চলতি বছরের বাজেট উন্নয়ন ব্যয় ৮১.৫২ শতাংশ ছাড়াও রাজস্ব ব্যয় ১৫.০২ শতাংশ, অন্যান্য ব্যয় ১.৫৭ এবং সমাপনী স্থিতি ১.৮ শতাংশ রাখা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় মেয়র আরও বলেন, এবারের অর্থবছরে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের খাতগুলো হলো- বেতন বাবদ ২৪০ কোটি টাকা, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৫৬০ কোটি ৬৯ লাখ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও গ্যাস বাবদ ৭৯ কোটি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২৯ কোটি ৭৫ লাখ, মশক নিয়ন্ত্রণে সাড়ে ১১ কোটি টাকা, বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প খাতে ২০ কোটি টাকা। নাগরিক বিনোদনমূলক সুবিধাদি উন্নয়ন খাতে ১৫১ কোটি ৫০ লাখ, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন খাতে ৫৩৪ কোটি ৬৬ লাখ, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয় বাবদ ২০৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মেয়র জানিয়েছেন।
সাঈদ খোকন বলেন, অন্যান্য উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং সরকারি ও বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৭০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এবার বাজেটে ডিএসসিসির নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের খাতগুলো হলো হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে ৫০০ কোটি টাকা, বাজার সালামি থেকে ৬৫০ কোটি, বাজার ভাড়া ৩০ কোটি, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ ৬৫ কোটি, রিকশা লাইসেন্স বাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ, বাস-ট্রাক টার্মিনাল থেকে ৫ কোটি ৬০ লাখ, অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা বাবদ ৫ কোটি ৬০ লাখ, রাস্তা খনন ফি বাবদ ২৮ কোটি, যন্ত্রপাতি ভাড়া বাবদ ১০ কোটি, সম্পত্তি হস্তান্তর খাতে ৬৫ কোটি, শিশু পার্ক থেকে ৬ কোটি ৭০ লাখ, কমিউনিটি সেন্টার বাবদ আয় ৩ কোটি, অস্থায়ী আমানতের সুদ বাবদ ৩ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।
আয়তন ও লোকসংখ্যা অনুপাতে ঢাকা উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন উন্নয়নে এগিয়ে আছে দাবি করে সাঈদ খোকন বলেন, ডিএসসিসির আয়তন ৪২ বর্গকিলোমিটার ও জনসংখ্যা ১৮ লাখ ৫০ হাজার। অপরদিকে, ডিএনসিসির আয়তন ৮২ বর্গকিলোমিটার ও লোকসংখ্যা ২৫ লাখ। বাজেট বাস্তবায়নের হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিএনসিসি মাত্র ৪১ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করলেও ডিএসসিসি বাজেট বাস্তবায়ন করেছে ৫২ শতাংশ।
তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিশ্ব ব্যাংক, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের সহায়তায় ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট নামে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নভেম্বরের শেষ নাগাদ কাজ শুরু হবে। প্রাথমিক অবস্থায় বাবুবাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত উন্নয়ন করা হবে।
এসময় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালসহ কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি