বরিশালে পিস স্কুলের অধ্যক্ষের পদত্যাগ
শামীম আহমেদ, বরিশাল : জামায়াতি যোদ্ধা তৈরির ব্যাপক কুখ্যাতি অর্জনকারী বরিশাল নগরীর পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব কর্মকা-ের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পর নাটকীয়ভাবে অধ্যক্ষ তার স্বপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন জানান, পিস স্কুলের বিষয়ে হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কারা জড়িত সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন স্বপদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য গত ১৬ জুলাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সম্প্রতি পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিতর্ক এড়াতেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। পিস স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাউসারুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেনের পদত্যাগপত্র বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পদত্যাগপত্রে অধ্যক্ষ তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।
সূত্রমতে, নগরীর ৪৭ কলেজ এভিনিউয়ের জিমি কটেজ ভাড়া নিয়ে গত এক বছর পূর্বে বরিশালে পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের যাত্রা শুরু হলেও নির্দিষ্ট লোকের বাইরে কেউ এ প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেন না। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরুকালে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিল ড. জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। ফলে অল্পদিনেই এখানে ২শ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। অতিসম্প্রতি জাকির নায়েকের বুদ্ধিবৃত্তিক জঙ্গিবাদ প্রচার ফাঁস হওয়ার পর কথা ঘুরিয়ে নিয়েছেন বরিশালের পিস স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
স্কুল কমিটির নেতৃবৃন্দরা বলছেন, এ স্কুলের সঙ্গে জাকির নায়েকের ফাউন্ডেশনের কোনো সস্পৃক্ততা নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরাসরি জামায়াতে ইসলামী পরিচালনা করছে পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজ বরিশাল শাখা। ইনভাইট পিস নামের একটি কোম্পানি স্কুলটি পরিচালনা করছে। যার (ইনভাইট পিস লিমিটেড) এর চেয়ারম্যান আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ। যিনি শিবিরের ১১তম সাবেক সভাপতি। ১৯৯১-৯২ সেশনে আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন।
আরও জানা গেছে, পিস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঠক্রম অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এমনকি বোর্ডের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখানে সরকার স্বীকৃত পাঠ্যক্রম প্রচারণায় ব্যবহৃত হলেও মূলত ‘জামায়াতি পাঠ্যক্রম’ অনুসারে পরিচালিত হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমনই লেখা থাকুক না কেন, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকরা ভিন্নভাবে তা ব্যখ্যা করে থাকেন। এখানে কখনো জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না। তবে ইসলামি শিক্ষার নামে বিভিন্ন যুদ্ধের চুম্বুকাংশ প্রায় প্রতিদিন শিশুদের মাঝে বাধ্যতামূলক ‘বয়ান’ দেওয়া হয়। সচেতন নাগরিকদের মতে, এটা জামায়াতের একটা কৌশল। ইসলামি শিক্ষার নামে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে ছোট থেকেই শিশুদের মনে ‘জিহাদি’ হওয়ার প্রবণতা তৈরি করা হচ্ছে। ফলে এ প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও আরবি শেখানোর নামে সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া বা আফগানিস্তানে তালেবান এবং আইএসএসের যোদ্ধাদের মানুষ হত্যার গল্প ‘লেসন স্পিড’ হিসেবে পড়ানো হয়। এ প্রতিষ্ঠানের ২১ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনই জামায়াতের সমর্থক। এখানে জামায়াত বা শিবিরের সুপারিশ ছাড়া কিছুই হয় না। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা