হামলার আশঙ্কায় বিভিন্ন স্কুলে আট দফা নির্দেশনা সবচেয়ে কম নিরাপত্তাব্যবস্থা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে কম নিরাপত্তা রয়েছে। কারণ বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষিত ও দক্ষদের নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়নি। অধিকাংশকেই পিয়ন হিসেবে চাকরি দিয়ে পরে দারোয়ান করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একজন নিরাপত্তা রক্ষীর যে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তা নেই তাদের। কয়েকটি স্কুলে পেশাজীবী নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ঢিলেঢালা। অথচ সেখানেই নিরাপত্তা হুমকি এখন সবচেয়ে বেশি। এই মূল্যায়ন গোয়েন্দাদের।
সূত্র জানায়, ঢাকায় স্কুল শুরুর আগে নিরাপত্তা প্রহরীরা দায়সারা গোছের আইডি কার্ড দেখে। ছুটির সময়েও কালেকশন কার্ড দেখা হয় একইরকমভাবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখেও না। চেহারা পরিচিত মনে করেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। স্কুল শুরুর পর গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোনো অভিভাবক এলে তাকে ভেতরে নেওয়া হয় অফিসে কথা বলার জন্য। যারা শিক্ষার্থীদের নিতে আসেন তাদের কাউকে যেতে দেন, কাউকে দেওয়া হয় না। ইংলিশ মিডিয়ামের এমন চিত্র। বাংলা মিডিয়ামের স্কুলের নিরাপত্তা এক থেকে তিনজন দারোয়ানের উপর নির্ভরশীল। তারা গেটে বসে থাকে। কেউ এলে কে গেল সব সময় দেখে না। সরকারি স্কুলে কড়াকড়ি কিছু আছে। বেসকারি স্কুলে তা কম। সার্বিক দিক বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। সাম্প্রতিকালের জঙ্গিহামলার ঘটনা ঘটায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ও গোয়েন্দারা। তাদের দৃষ্টিতে এই সব সমস্যা উঠে আসা ছাড়াও নিরাপত্তাহীনতার আরও অনেক ত্রুটি ধরা পড়ে। তারা মনে করছে, অদক্ষ নিরাপত্তা প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা তাদের আহত করে জঙ্গিরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
নিরাপত্তা জোরদারে ক্রমে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে আট দফা নির্দশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে প্রতিটি ক্যাম্পাসে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, প্রতিটি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ, নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য মেটাল ডিটেকটরের ব্যবহার, ভিজিটরের জন্য গেটে রেজিস্টার প্রবর্তন, বেতন প্রদান কিংবা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, এরমধ্যে রয়েছে সকাল সোয়া নয়টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত, দুপুর পৌনে দুইটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। টিফিন ব্রেক এবং ছুটির সময় কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ছুটির সময় সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মধ্যে অভিভাবককে অবশ্যই ছাত্রছাত্রীকে স্কুল থেকে নিয়ে যেতে হবে। কেউ না জানিয়ে সর্বোচ্চ দশ দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তার নাম সরকারি বাহিনীকে জানানো হবে।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে বাংলাদেশে আরও বড় ধরনের হামলা হবে। তাতে অনেক মানুষকে হত্যা করা হতে পারে। সেই হিসেবে একসঙ্গে হত্যা করার জন্য জঙ্গিরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করতে পারে। সেখানে জঙ্গিরা প্রবেশ করে জিম্মি করে ফেলতে পারে শত শত শিশু-কিশোরদের। এই ধরনের জিম্মির ঘটনা ঘটলে ব্যাপক প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে। এই বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দিয়েছে। স্কুল ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। এরপর পরামর্শ দিয়েছে কি কি করতে হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের পরামর্শে সব স্টুডেন্ট ও অভিভাবকের জন্য নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থাও কার্যকর করেছে। এই জন্য বিভিন্ন স্কুলে নিরাপত্তা বার্তাও স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবককে দেওয়া হয়েছে। তারা যে নিয়ম করেছে ওই সব নিয়ম মানার জন্যও অনুরোধ করেছেন।
ঢাকার ধানমন্ডির ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রশাসন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য যা যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন সেই হিসেবে করেছি। এখন স্টুডেন্টদের মধ্যে কারও আচার-আচরণ সন্দেহজনক কিনা তাও লক্ষ্য করছি। ওই ধরনের কোনো সন্দেহজনক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে সেই সব ছাত্রকে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করব। এই ব্যাপারে কোনো অভিভাবকের জন্য অপেক্ষা করব না।
একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল তাদের নিরাপত্তা বার্তায় বলেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শক্রমে সার্বিক নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোনো অভিভাবককে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। স্কুল ছুটির সময় অভিভাববৃন্দ কালেকশন কার্ড পিয়ন/আয়া কিংবা নিরাপত্তা প্রহরীর নিকট দিয়ে বাইরে গেটে অপেক্ষা করবেন। বিশেষ প্রয়োজনে কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশির পর সন্তোষজনক হলে ঢুকতে দেওয়া হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের নিয়ম করায় বেশিরভাগ অভিভাবক সন্তুষ্ট। তবে তারা এটা বলেছেন, যারা গেটে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন তারাতো খালি হাতে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে জঙ্গিরা এলে তারা কি করতে পারবে? সম্পাদনা : সুমন ইসলাম