তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারে জঙ্গিরা পুরনো জঙ্গি সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সতর্ক থাকুন : প্রধানমন্ত্রী
দীপক চৌধুরী : দেশের পুরনো জঙ্গি সমস্যা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তারা ফায়দা লুটছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
‘উন্নয়ন উদ্ভাবনে জনপ্রশাসন-২০১৬’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জনপ্রশাসনে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রশংসা করে তিনি বলেন, আধুনিক, গতিশীল ও উদ্ভাবনীমূলক জনপ্রশাসনই দেশকে উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এক্সেস টু ইনফরমেশন’ (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের বিভিন্ন উদ্ভাবন দেশীয় ও আন্তর্র্জাতিক মহলে তুলে ধরতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশটি আমাদের সকলের। আসুন, তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য আরও নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করি। আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত, উন্নততর ও সহজলভ্য সেবা দিতে হলে আমাদের আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই জনগণ সেবার জন্য ঘুরবে না, সরকার জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেবে। আমাদের রয়েছে বিশাল মানবসম্পদ। তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে এই মানবসম্পদকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন ভালো কাজ হচ্ছে, আবার এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীরাও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কাজেই এজন্য আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে। বাংলার মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না- এই নীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনপ্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা সকলে মিলে একবিংশ শতকের উপযোগী আধুনিক, সেবামুখী, চৌকষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল মানবসম্পদ। মানবসম্পদকে আরও প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত করতে পারলে এ দেশ কোনোদিনই পিছিয়ে থাকবে না। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের উপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশটি আমাদের। আজকে এদেশের মানুষের জন্য যে সেবা দিয়ে যাব আগামী প্রজন্ম তার সুফল ভোগ করবে।
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত, উন্নততর ও সহজলভ্য সেবা দিতে হলে আমাদের আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমি মনে করি, জনপ্রশাসনের প্রতিটি সদস্যের সে যোগ্যতা, দক্ষতা আছে। শুধু চর্চা করার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের শেষে ‘উন্নয়ন উদ্ভাবনে জনপ্রশাসন-২০১৬’ শীর্ষক সামিট উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ইউএনডিপির এদেশীয় প্রতিনিধি পলিন টেনাসিস ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের পরিচালক কবীর বিন আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, মালদ্বীপ ও ভুটানের মন্ত্রী, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চট্টগ্রামÑ এই তিন জেলাকে শ্রেষ্ঠ জেলার এবং শ্রেষ্ঠ বিভাগ হিসেবে ঢাকাকে সম্মাননা প্রদান করেন। তিন জেলার জেলা প্রশাসক যথাক্রমে মোশাররফ হোসেন, হুমায়ুন কবির ও মেজবাহ উদ্দিন নিজ নিজ জেলার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। আর ঢাকা বিভাগের পক্ষে বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা স্মারক নেন।