অপারেশন স্টর্ম ২৬ মামলার এজাহারে যা বলা হয়
আজাদ হোসেন সুমন ও সুজন কৈরী : মামলার এজাহারে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ১০ জনকে আসামি করে ২৭ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন ইন্সপেক্টর অপারেশন শাহজালাল। মামলার আসামিরা হচ্ছে রকিবুল হাসান ওরফে রিগান, ইকবাল (পলাতক ), তামিম চোধুরী, রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজ।
থানায় দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৬ জুলাই রাত ১২টা ১০ মিনিটে মিরপুর জোনের উপ-কমিশনার মাসুদ আলমের নেতৃত্বে কল্যাণপুর এলাকায় ব্লকরেইড শুরু হয়। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটের সময় ৫নং রোডের ৫৩ নম্বর তাজ মঞ্জিলের ৬ষ্ঠ তলা ভবনের ৫ম তলা ফ্ল্যাটে পুলিশ অবস্থান নেয়। এ সময় ৫ম তলায় পশ্চিমপাশের ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের অবস্থানরত কক্ষের দরজায় নক করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে পালানোর চেষ্টা করে। এতে পুলিশের এসআই দীল মোহাম্মদ আহত হন। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে এক জঙ্গিকে আহত অবস্থায় আটক করা হয় এবং অপর জঙ্গি পালিয়ে যায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিচে থাকা পুলিশ সদস্যরা ভবনের সামনে পিছে এবং বিভিন্ন তলায় অবস্থান নেয়। এরপর পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে মিরপুর জোনের ডিসি মিরপুর বিভাগের সকল পুলিশ এবং কন্ট্রোল রুম থেকে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানোর জন্য ওয়্যারলেস ম্যাসেজ পাঠান। এরপর ওই ভবনটিকে চারপাশ থেকে কর্ডন (ঘিরে) করে রাখে পুলিশ। যাতে ভবনে থাকা জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে না পারে। কিছুক্ষণ পর জঙ্গিরা জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট সেøাগান দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। বিষয়টি পুলিশের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে অত্র এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর তৈরি করে ওই ভবন ও আশপাশ এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ঘটনা জানার পর পরই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ক্রাইম অ্যান্ড অপস, যুগ্ম কমিশনার ডিবি, ডিবি পশ্চিম জোনের ডিসি এবং ডিবি, সিটি, সোয়াতটিম ও বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। জঙ্গিরা আবারো পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। ফলে আশপাশের জনগণের জানমাল হুমকির মুখে পড়ে এবং বড় ধরনের ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা মাইকিং করে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। এরপরও জঙ্গিরা জঙ্গি সংশ্লিষ্ট নানা সেøাগান দেয় এবং পুলিশের উপর হামলা অব্যাহত রাখে। উদ্ভুত আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষ অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। অপারেশন বিশেষজ্ঞ সোয়াটটিম অভিযানের অগ্রসর হয়ে মডেল থানা পুলিশের সাথে ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় জঙ্গিরা সোয়াট টিমকে লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে গুলি বর্ষণ ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এই দলটিও পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী গুলি বিনিময়ের পর সোয়াট টিম জঙ্গিদের অবস্থান কক্ষে ঢুকে ৯ জঙ্গির মৃতদেহ, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ডেটোনেটর, আগ্নেয়াস্ত্র জিহাদী বই ধারালো অস্ত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র দেখতে পায়। মিরপুর মডেল থানার ওসি ভূইয়া মাহবুব স্বাক্ষরিত সন্ত্রাস দমন আইনে দায়েরকৃত মামলার তদন্তভার থানার তদন্ত ইন্সপেক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম