আশপাশের দোকান-স্কুল বন্ধ, জাহাজ বিল্ডিংয়ে তালা জঙ্গি আস্তানা নিশ্চিহ্ন হলেও আতঙ্ক কাটেনি কল্যাণপুরে
আজাদ হোসেন সুমন ও সুজন কৈরী : কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের জাহাজ বাড়িতে যৌথবাহিনীর ঝড়ো অভিযানে জঙ্গি আস্তানা নিশ্চিহ্ন হওয়ার পরও এই এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক কাটেনি। স্কুল পড়–য়া শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। তাজ মঞ্জিলের (জাহাজ বাড়ি) গেটে ঝুলছে পুলিশের তালা। গত মঙ্গলবার রাতেই তাজ মঞ্জিলের ভাড়াটিয়াকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, একজন সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ২১ পুলিশ সদস্য সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। জাহাজ বিল্ডিংয়ের দরজার পাশে আরেকটি ভবনের সামনে ভাই ভাই নামে একটি টেইলার্স। এই দোকানটি ঘটনার দিন থেকে বন্ধ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দোকান মালিক শান্ত এসে দোকান খোলেন। এ সময় পুলিশ কনস্টেবল এসে দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। শান্ত তখন জবাবে জানায়, এখনতো আর কিছু নেই। এখন কেন দোকান বন্ধ রাখতে হবে। কনস্টেবল ইব্রাহিম কিছুটা রাগান্বিত হয়ে শান্তকে বলেন, দ্যাখেন এটা উপরের নির্দেশ, সেটা পালন করতেই হবে। কনস্টেবল চলে যাওয়ার পর শান্তর সাথে কথা হয়, শান্ত বলেন ঘটনার রাতে তার ছোট ভাই প্রকাশ টেইলার্সেই ঘুমিয়ে ছিলেন, রাত সাড়ে ১২টায় মুহূর্মুহূ গুলিও গ্রেনেডের শব্দে এতটাই ভয় পায় সে।
ওই বাড়ির পাশের ভবনটিতে শিশুকল্যাণ কেজি ইন্টার ন্যাশনাল স্কুলটিও বন্ধ রয়েছে। ঢুকেই দেখা গেল সদর দরজা খোলা থাকলেও ভেতরে কেচি গেট তালাবদ্ধ রয়েছে। পাশেই নিউ শাহীন ট্রেডার্স নামে একটি ফোন ফ্যাক্স ও শামীম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কনফেকশনারির দোকানও তালাবদ্ধ। আশপাশে একাধিক বাড়ি থেকে শিশুরা দরজায় উঁকি দিয়ে আবার ভেতরে চলে যাচ্ছিল। এ সময় ৪৭ নম্বর ভবনে ঢুকে শিশুর মা গৃহবধূ তাসলিমা খাতুন জানালেন, ওইদিন রাত সাড়ে ১২টা থেকে গুলি ও বোমার শব্দে তারা ঘুমাতে পারেননি, শিশুরা আতঙ্কিত। তাই জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে পুলিশ দেখে আর বলে আম্মু পু-লি-শ ।
৪৮/৩ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা গৃহবধূ খালেদা বেগম। স্বামী কাতারে তাই তিন ছেলেকে নিয়ে ভবনের ৪ তলায় থাকেন তিনি। ঘটনার রাতে তার বড় ছেলে সাদ জানায় আম্মু বাইরে অনেক পুলিশ। এরপর সাড়ে ১২টা থেকেই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। তারা রাত আড়াইটা পর্যন্ত গোলাগুলি শুনেছেন। ঘটনা জেনেছেন পরদিন। পরদিন তারা প্রতিবেশীর কাছ থেকে শুনতে পান জাহাজ বিল্ডিংয়ের ৫ তলায় জঙ্গি আস্তানা ছিল। পুলিশ ৯ জঙ্গিকে গুলি করে মেরেছে। খালেদা বলেন, আমার ৫ বছরের শিশু এখনো ভীত সন্ত্রস্ত। ঘটনার পর থেকে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
পাশেই নিউ মডার্ন নামে একটি ফার্নিচার দোকান খোলা আছে, স্বাভাবিক গতিতেই কাজ চলছে। জঙ্গিদের আগে তারা দেখেছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে কর্মচারী সামসুল আলম বলেন, শুনেছি ওরা এখানে নতুন এসেছে। তিনি আরও বলেন, ওই বাসায় আরও কয়েকটি মেসে বহু ব্যাচেলর থাকে। জঙ্গিরাওতো মানুষের মতই তাদের আলাদা করে চেনার কোনো উপায় নেই।
ঘটনাস্থল দেখতে এসেছেন ঢাকা টোবাকোর ৪ অফিসার। এরমধ্যে একজন মিরপুর টেরিটোরির, নাম রাশেদুল। প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, কি হচ্ছে? কেন এমন হচ্ছে? দেশটা কি দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে! এর জন্য দায়ী কে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিরা আর সুবিধা করতে পারবে না। মানুষ জেগে উঠেছে। যদি কোনো রাজনৈতিক দলও জঙ্গিবাদকে পুঁজি করে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে, তাহলে মানুষ তাদের বয়কট করবে, ছুড়ে ফেলে দিবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম