পার্বতীপুর রেলস্টেশন, সেবার মান না বাড়ায় কমেছে যাত্রী
সোহেল সানী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) : যাত্রীসেবার মানের উন্নতি না হওয়ায় ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। একই কারণে দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে জংশন দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলস্টেশনের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
এ অর্থবছরে বার্ষিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৯ টাকা। কিন্তু রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ কোটি ৫২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৫ টাকা। ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন উভয় খাতে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ব্রডগেজ ও মিটার গেজ মিলে ৮ আন্তঃনগর ট্রেনসহ মোট ৪২টি ট্রেন চলাচল করে।
স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলেছেন, গত বছরের বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ট্রেনের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে যাত্রীরা বলছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রেনের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি, বিলম্বে ট্রেন চলাচল ও সেবার মান নিম্নমুখী হওয়ায় ট্রেনে ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন মানুষ। পার্বতীপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পার্বতীপুর রেলস্টেশন থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১ জন যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করে। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮২২ জনে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৬। কিন্তু যাত্রী পরিবহনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এখাতে আয় দাঁড়ায় ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪২৭ টাকা। এ ছাড়া পণ্য পরিবহন খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮২ টাকা। কিন্তু আয় হয়েছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৯১১ টাকা।
আন্তঃনগর একতা ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী বলেন, ট্রেনটির আসনগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় বেশির ভাগ সময় ধুলাবালিতে ভরে থাকে। একই অবস্থা টয়লেটগুলোর। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় অনেকেই ব্যবহার করতে চান না। মাঝেমধ্যে টয়লেটে পানি থাকে না। ট্রেনের খাবার গাড়িতে খাবারের মান ভালো না হলেও দাম চড়া।
নীলসাগর ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ট্রেনে পার্বতীপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ৮ ঘণ্টা লাগার কথা থাকলেও মাঝেমধ্যে ১০ ঘণ্টাও লাগে। আর ঢাকা থেকে ট্রেন দেরি করে ছাড়াটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করলে স্টেশন মাস্টার শোভন রায় বলেন, সময়মতো ট্রেন ছাড়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। খাওয়ার গাড়িতে নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়, কিন্তু এ ব্যাপারে যাত্রীদের তেমন অভিযোগ নেই। লোকবল কম থাকায় যাত্রীদের সঠিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা তৈরি হয়। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে এমনটা হতো না। তবে আগামীতে আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব ব্যবস্থাই করা হবে।