মংলাবন্দরের পৌরসভার বেহালদশা
ফকির হাসান আলী, বাগেরহাট : প্রায় একশ বছরের পুরাতন মংলা পৌর ভবনটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থায়। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ ফুঁটো হয়ে ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়ে। এছাড়া ভবনের গায়ে বড় বড় চিড় ধরেছে। পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে । আর এ অবস্থা থেকে নিরশনে নতুন ভবন তৈরির জন্য জায়গা চেয়েও কর্তৃপক্ষের মিলছে না। ফলে মহাবিপদ সংকেত মাথায় নিয়েও দৈনিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টি স্থানীয় এমপির সহায়তায় দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা পৌর পিতার।
মংলা পৌরসভায় সৃষ্টি থেকে কার্যসহকারী হিসেবে কাজ করেছেন মো. আবু বক্কার ছিদ্দিক। তিনি জানান, ১৯৭৫ সালের ১ ডিসেম্বর মংলা পৌরসভার সৃষ্টি হয়। শুরুতে সৈয়দ মাঝি নামে জনৈক এক ব্যক্তির বাড়িতে গোলপাতার ঘরে ৩৫ কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে পৌর কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে ৯ মাস থাকার পর মো. কাদের হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে একটি টিনের ঘরে পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়।
এর এক বছর মাথায় এখন থেকে সরে শহরের ভিতর ইলিয়াচ ভবনে (বর্তমানে যে ভবনে পৌর কার্যক্রম চলছে) পৌর কার্যক্রম শুরু হয়। ইলিয়াচ ভবন সম্পর্কে ছিদ্দিক বলেন- এ ভবনটি পাকিস্তানের ইলিয়াচ হোসেন নামে এক বিহারীর ছিলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি এই ভবন ফেলে চলে যান। পরবর্তীতে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ডিসির (বাগেরহাট জেলা প্রশাসক) নিয়ন্ত্রণে চলে যায় ভবনটি। সেখান থেকে লিজ হিসেবে নিয়ে ভবনটি পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করছে। ৮৫ থেকে ৯০ বছরের পুরাতন দ্বিতল এ ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
মংলা পৌরসভার উচ্চমান সহকারী মো. সহিদ বলেন- পৌর ভবনে বৃষ্টির সময় যেন ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়ে। মেঝে চুষে পানি এক ফুট উপরে ওঠে। চেয়ার, টেবিল ভাসে। পরে কৃত্রিম উপায়ে পানি নিষ্কাশন করে কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হয়। এছাড়া ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আতঙ্কতো আছেই।
পৌর সভার সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান- তিনি পৌর ভবনের দোতালার একটি কক্ষে অফিস করছেন। এ পর্যন্ত দুবার তার মাথার উপরের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। তবে তিনি দুইবারই ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে কি ঘটবে সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে তার ভিতর।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম জনান, পৌর ভবনটি বাহির থেকে চাকচিক্ক দেখা গেলেও ভিতরের কন্ডিশন অত ভালো না। এ ব্যাপারে তিনি পৌর মেয়রকেও অবহিত করেছেন।’
পৌর ভবনটিতে ঝুঁকি রয়েছে স্বীকার করে মংলা পৌর মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, বর্তমানে পৌরসভায় ১০৬ জন স্থানী ও অস্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। সকলের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আপাতত পাশের একটি বিল্ডিংয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া হবে। এক প্রশ্নে জবাবে মেয়র বলেন, পৌর ভবন করতে হলে আমাদের একটি সম্পত্তির দরকার। সেটা আমাদের নেই। আমরা মংলা নদীর সাইডে (পাড়ে) একটি জায়গা চেয়েছিলাম ভবন করার জন্য। জেলা প্রশাসক ৫০ শতক জমি দিতেও চেয়ে ছিলো কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় গিয়ে সেটা আটকে যায়। এছাড়া এ সম্পত্তি নিয়ে হাই কোটে মামলা থাকার কারণে পৌর ভবনের জন্য জায়গা পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। তবে বিষয়টি স্থানীয় এমপি তালুকদার আব্দুল খালেকের মধ্যস্থতায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, ডিসি, পাবলিক ( যাদের এ জমি লিজ ছিলো) সন্ময় করে একটা মীমাংসা করা চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত সমাধান হলে বলেও আশা করেন মেয়র।
জুলফিকার আলী আরো বলেন, পৌর ভবনের জায়গা নির্ধারণ হলে বাংলাদেশের সেরা পৌর ভবনের মালিক হবে মংলাবাসী। ছয়তলা বিশিষ্ট একটি পৌর ভবন করা হবে। ভবনের ভিতরে থাকবে ব্যাংক, মসজিদ, অডিটরিয়াম, গাড়ির গ্যারেজ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য একটি পানির ফুয়ারা। এছাড়া একটি দ্বিতল আধুনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৈরি হবে। ভবনের নকশা ইতোমধ্যে চুড়ান্ত করা হয়েছে। যার ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। ১৯৭৫ সালের ১ ডিসেম্বর ১৯ দশমিক ৪৩ বর্গ কি.মি এলাকা নিয়ে মংলা পৌরসভার সৃষ্টি হয়। ১৯৯০ সালের ১০ নভেম্বর এটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয় এবং ২০১২ সালের ১২ এপ্রিলে এ পৌরসভা প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট দেড় লাখ মানুষ বাস করে ।