৭টি তথ্য, যা শিবলিঙ্গ সম্পর্কে আপনার যাবতীয় ধারণা বদলে দেবে
ডেস্ক রিপোর্ট
অনেকে যে একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা। তাছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়। কাজেই তার লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা প্রয়োজন।
অজানা রহস্যে মোড়া শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের পূজা হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। শিব মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের অবস্থান বহু প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতে প্রচলিত রয়েছে। এই রীতি সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণাও মানুষের মনে রয়ে গিয়েছে। এখানে রইল শিবলিঙ্গ সম্পর্কে ৭টি তথ্য, যা সকলেরই জেনে রাখা প্রয়োজনÑ
১. শিবলিঙ্গের পূজা কেবল ভারত আর শ্রীলঙ্কায় সীমাবদ্ধ নয় : প্রাচীন রোমে ‘প্রায়াপাস’ নামে যে বিগ্রহের পূজা হতো, অনেকের মতে সেটি শিবলিঙ্গই ছিল। হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ।
২. শিবলিঙ্গে থাকে মোট তিনটি অংশ : সবচেয়ে নিচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নিচে। তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে। আর একেবারের উপরের অর্ধবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়। এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ। এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নিচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে। বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই অংশের নাম গৌরীপট্ট, যা মূলত যোনিপ্রতীক।
৩. শিবলিঙ্গ পূজার মধ্যে কোনো অশ্লীলতা নেই : শিবলিঙ্গ একই সঙ্গে শিবের সৃজনাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক। অনেকে যে একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা। তা ছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়। কাজেই তার লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা প্রয়োজন।
৪. স্বামী বিবেকানন্দের ব্যাখ্যা : স্বামীজী ‘অথর্ববেদ’-এর শ্লোক উদ্ধৃত করে শিবলিঙ্গকে আদি ব্রহ্মের স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তার মতে, আদি ও অন্তহীন ব্রহ্মের প্রতীক হলো শিবলিঙ্গ।
৫. শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা : শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে। বিজ্ঞানী নিলস বোরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই তিনটি খাঁজ আসলে অণুর তিনটি উাপাদানÑ প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের প্রতীক। এই তিনটি উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মা-। অর্থাৎ কার্যত ব্রহ্মা-ের গঠনের প্রতীক হলো শিবলিঙ্গ।
৬. শিবলিঙ্গের বৈদিক ব্যাখ্যা : শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মা-ের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা। এই ‘মিলন’-এর অর্থ অবশ্য শারীরিক মিলন নয়, বরং এ এক অতিপ্রাকৃত মিলন। প্রসঙ্গত এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, সংস্কৃত ভাষায় ‘লিঙ্গ’ শব্দটির অর্থ কিন্তু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্ন। নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন।
৭. শিবলিঙ্গের গায়ে যে সাপটি থাকে তা আসলে সুপ্ত চেতনার প্রতীক : শিবলিঙ্গের গায়ে অনেক সময়ে যে সাপটি প্যাঁচালো অবস্থায় দেখা যায়, সেটি আসলে কুলকু-লিনীর প্রতীক। এই শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ।