সব হিন্দু মৃতদেহই কি দাহ করা হয়?
নিজস্ব প্রতিবেদন
সাধারণভাবে হিন্দু সৎকারপদ্ধতি দাহকার্য। ত্যক্ত দেহকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করে তার উপাদানগুলোকে শুদ্ধ করে পঞ্চভূতে লীন করাই এই সৎকারপদ্ধতির উদ্দেশ্য।
দাহকার্যের প্রথা প্রাচীন ইউরোপেও ছিল। ক্রমে তা লোপ পায়। কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী ভারতীয়রা দাহকার্যকে অপরিহার্য সৎকার-ক্রিয়া মনে করতেন। বিশ্বাস ছিল, দাহ না সম্পন্ন হলে আত্মার মুক্তি ঘটে না।
কিন্তু, সত্য এইসব হিন্দু মৃতদেহেরই দাহ-সৎকার ঘটে না। কতগুলো বিশেষ ক্ষেত্রে শাস্ত্র এবং লোকাচার দাহকার্যকে নিষিদ্ধ বলে বিধান দেয়। জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে।
সন্ন্যাসীদের মৃতদেহ দাহ হয় না। তবে সব সন্ন্যাস মার্গে এই বিধান প্রচলিত নেই। দশনামী সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েকটি সলিল সমাধিতে বিশ্বাস রাখে। কারণ সন্ন্যাসী সংসারত্যাগী। তার কোনো অপত্য থাকতে পারে না। সুতরাং তার মুখাগ্নি সম্ভব নয়। সে কারণেই তার দেহ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
শিশুদের মৃতদেহ দাহ হয় না। একটা বিশেষ বয়স পর্যন্ত শিশুদের দাহকার্য নিষিদ্ধ। হিন্দু ঐতিহ্যে মনে করা হয়, পূর্ণ দেহ প্রাপ্তি না ঘটলে দাহ সম্ভব নয়।
অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও দাহ করার নিদান নেই। বৌধায়ন তার ‘ধর্মশাস্ত্র-এ জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মৃত নারীকে শ্মশানভূমিতে নিয়ে আসা হবে। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন গর্ভস্থ শিশুর প্রাণরক্ষা। সেটা সম্ভব না হলে মৃতাকে হয় ভাসিয়ে দিতে হবে, নয়তো কবর দিতে হবে।
কোনো কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দাহ করার রেওয়াজ নেই। বাংলায় ‘জাতবৈষ্ণব’ নামের একটি সম্প্রদায় তাদের সদস্যদের মৃতদেহ সমাধিদানেরই পক্ষে। তবে, ইদানীং তারাও দাহই করছেন। সাপে কাটা মৃতদেহ সাধারণত দাহ না করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। এই রেওয়াজ একান্তভাবে বাংলাতেই প্রচলিত ছিল। ‘মনসামঙ্গল’ অনুযায়ী লখীন্দরের জীবন ফিরে পাওয়ার ঘটনায় বিশ্বাস থেকেই এমনটা করা হতো।