বড় বন্যার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ!
কালাম আজাদ : এবার বড় ধরনের বন্যা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এলনিনোর প্রভাবে এ বন্যা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৭ সালে বাংলাদেশে এলনিনোর প্রভাবে বন্যা হলেও এবার এর তীব্রতা অনেক বেশি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে দেশের বিশেষজ্ঞদের বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও বলছে, এবার বাংলাদেশে তীব্র বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এবারের এলনিনো হবে ১৯৫০ সালের পর থেকে চতুর্থ শক্তিশালী। এর আগের শক্তিশালী এলনিনোগুলো হয়েছিল ১৯৭২-৭৩, ৮২-৮৩ ও ৯৭-৯৮ সালে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, এলনিনো ও লানিনোর প্রভাবে সাধারণত বন্যা হওয়া ও না হওয়া নির্ভর করে। এলনিনো প্রতি ৩ থেকে ৭ বছরে একবার ফিরে আসে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০০৭ সালে এলনিনোর প্রভাবে বন্যা হয়েছিল। এলনিনো হলো- প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের পানির তাপমাত্রার একটি পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন। এর কারণে প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। এটা দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে ভারত মহাসাগর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রভাব ফেলে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে সাধারণত বন্যার সময় এলনিনো ও লানিনোর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর হলো বৃষ্টির সময়। এই সময়টাতে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার ও চীনে বৃষ্টি হয়। সেখান থেকে পানি নেমে বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যায়। এটা বাংলাদেশে আসতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। এ সময় চাঁদপুরের মেঘনার মোহনায় এসে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বের হতে না পারলে বড় বন্যা হয়। আবার মরাকাটাল-ভরাকাটালের প্রভাবে সমুদ্রে জোয়ার-ভাটার কারণে পানির উচ্চতা যদি বেশি থাকে তখনও পানি নামতে পারে না। এমনটি হলে বড় বন্যা হয়। এ বন্যা বেশি সময় অবস্থান করে। ভোগান্তি হয় অনেক বেশি।
এখন এলনিনো বছর চলছে। এটা চলতি বছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে। যে কারণে প্রবল বন্যা ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে বড় বন্যার পূর্বাভাস হিসেবে ইতোমধ্যেই বেশকিছু জেলা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দেশের বেশকিছু অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
হংকংয়ের আবহাওয়া পূর্বাভাসবিষয়ক সংস্থা হংকং অবজারভেটরির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের মে মাসে এলনিনো শুরু হয়েছে। চলবে ২২ মাস। প্রতিবেদন মতে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা ছিল সবচেয়ে বেশি।
জাতিসংঘের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএমও’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এলনিনোর প্রভাবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশসহ ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রচ- খরা ও বন্যা দেখা দিতে পারে। আর বাংলাদেশের নিচের কিছু অংশ ক্রান্তীয় এবং বাকি অংশ উপক্রান্তীয় অঞ্চলে পড়ায় আবহাওয়ার উপর এলনিনোর বিরূপ প্রভাব পুরোপুরিই বাংলাদেশের উপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডব্লিউএমও’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। যে কারণে এ বছরের এলনিনো হবে ১৯৫০ সালের পর থেকে চতুর্থ শক্তিশালী।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী তিনমাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও দু-তিনদিন দেশের কয়েকটি জেলায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আবহাওয়া অধিদফতরের তিনমাসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুলাইয়ে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি করে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম