৫ তলার ১৪টি কক্ষ ছিল জঙ্গিদের আস্তানা শেজাদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি
সুজন কৈরী : রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংখ্যাত তাজ মঞ্জিলের জঙ্গিঘাঁটিতে ঝটিকা অভিযানে নিহত জঙ্গি শেজাদ রউফ অর্ক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে নিহত জঙ্গি আবু হাকিম নাইমের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উল্লেখ করা হলেও তার বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুরে বলে জানা গেছে। ওই আস্তানা থেকে উদ্ধার করা আইএসের পতাকাসহ জঙ্গিদের ছবি প্রচারের জন্যই নিহত জঙ্গিরা তুলেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও জঙ্গি উদ্ধারের ওই অভিযান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে চলছে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা। এছাড়া আহত অবস্থায় আটক জঙ্গি রিগ্যানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই আস্তানার জঙ্গি প্রশিক্ষকসহ ৯ পলাতক জঙ্গিকে আটক করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের মধ্যে মোস্ট ওয়ানটেড বাংলাদেশ ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক তামিমও রয়েছেন।
অপরদিকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, শেজাদের বাবার দাবি অনুযায়ী শেজাদের নাকে তিল ও একটি কান একটু বাঁকা তা মিলেছে। কিন্তু শেজাদের বাবা লাশ দেখে বলছেন দেখতে খুব শুকনা লাগছে। ডিএনএ টেস্টের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে গতকাল ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে শেজাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ঢাকায় পুলিশের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আমি খবরে দেখেছি। কিন্তু তিনি তদন্ত ও পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয় বলে আর কোনো মন্তব্য করেননি কিরবি। তিনি বলেন, আমরা জানি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে। আরও তথ্য জানতে চাইলে আপনাদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা উচিত।
শেজাদের মার্কিন নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত কি না জানতে চাইলে কিরবি বলেন, আমি কেবল এটুকু নিশ্চিত করতে পারি, ঢাকায় পুলিশের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক নিহত হওয়ার খবর আমরা দেখেছি। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র খতিয়ে দেখেছে কিনা এমন প্রশ্নে মুখপাত্র কিরবি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পরিবারের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা বিবেচনা করে আমরা আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার পুলিশের অভিযানে নিহত অর্ক যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি।
অপরদিকে শেজাদ অস্ত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন বলে জানা গেছে। উইকিলিকসের ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে ফাঁস করা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নথি অনুসারে দেখা যায়, সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর আব্দুর রউফ ১৯৭৭ সালের ৬ এপ্রিল অস্ত্র ব্যবসার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিউভিক্টর লিমিটেড (এনভিএল) গড়ে তুলেন। তার ছেলে ও শেজাদের বাবা তৌহিদ রউফ ১৯৮৮ সাল থেকে অস্ত্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এনভিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে কর্মরত। আর শেজাদ এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে ছিলেন।
অপরদিকে, গতকাল কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)-এর প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত জঙ্গিরা লাল স্কার্ফ মাথায় বেঁধে কালো পাঞ্জাবি পরে কথিত আইএসের আত্মঘাতী দলের পোশাকে বেশ কিছু ছবি তুলেছিল কল্যাণপুরের ওই আস্তানায়। অভিযানের পর জঙ্গি আস্তানার কিছু ছবি উদ্ধার পুলিশ। যার একটিতে মেসের জানালায় আইএসের পতাকা ও পাশে নীল পর্দা ঝুলতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে পুলিশের ঘেরাওয়ে থাকার সময়েই ছবিগুলো তোলা হতে পারে। গুলশান হামলার সময়ে যেভাবে ছবি তুলে দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছিল এবারেও সেই একই কৌশল নিতে পারে জঙ্গিরা। সম্পাদনা : দীপক চৌধুরী