‘অতীত থেকে শক্তি সঞ্চয় করেই সামনে এগোতে হবে’
দীপক চৌধুরী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অতীতকে স্মরণে রেখেই তা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে হবে। একাত্তরে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে তৎকালীন পূর্ববাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি স্বাধীনতার পূর্বের বাঙালিদের অবস্থান তুলে ধরতে চাই। আমি এটা বারবারই প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করি, তার কারণ এ বৈষম্যের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রাতে শের-ই-বাংলানগরে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলন ২০১৬-তে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১-এ আমাদের স্বাধীনতা এনে দেন। এটা কিন্তু একদিনে আসেনি। ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে বিজয় অর্জনের মাধ্যমেই এ স্বাধীনতা আসে। কিন্তু আজ অনেকেই ভুলে যান তখন (স্বাধীনতার পূর্বে) বাঙালিদের কি অবস্থা ছিল, বাঙালিরা কোন অবস্থানে ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন ১২শ মাইলের দূরত্বে পাকিস্তানের দুটি প্রদেশের একটি ছিল পূর্ববাংলা এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান।
১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় কর্মক্ষেত্রে পূর্ববাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জাতিগত বৈষম্যের যে চিত্র উপস্থাপিত হয় তা প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তুলে আনেন।
পাকিস্তান সরকারে সচিবদের পদ ছিল ২২টি। যার সবকটির পদাধিকারী ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানিরা।
যুগ্ম-সচিব পদে পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ৪২ জন এবং বাঙালিদের ৮ জন। উপ-সচিব ৬৯টি পদে আসীন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা, অন্যদিকে ২৩ জন ছিলেন বাঙালি। সেকশন অফিসার- পশ্চিম পাকিস্তানিরা ছিল ৩২৫ জন আর বাঙালিরা ৫০ জন। প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার-পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ৩ হাজার ৭৬৯ জন এবং বাঙালি ৮১১ জন। সিনিয়র গেজেটেড অফিসার পশ্চিম পাকিস্তানি ৬৯২ জন আর বাঙালি ৪২ জন। ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে- পশ্চিম পাকিস্তানি ১৬২ জন আর বাঙালি ৩ জন। রেডিওতে- পশ্চিম পাকিস্তানি ৯৮ জন আর বাঙালি ১৪ জন। সাপ্লাই অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিভিশন- পশ্চিম পাকিস্তানি ১৬৪ জন আর বাঙালি ১৫ জন। রেলওয়েতে- পশ্চিম পাকিস্তানি ১৫৮ জন আর বাঙালি কর্মকর্তা ৫০ জন। ডাক ও টেলিগ্রাফ বিভাগে- পশ্চিম পাকিস্তানি ২৭১ জন আর বাঙালি ৫০ জন। এগ্রিকালচার ইকোনমি কর্পোরেশনে- পশ্চিম পাকিস্তানি ৩৮ জন আর বাঙালি ১০ জন। বিমানে- পশ্চিম পাকিস্তানি ১ হাজার ৭৫ জন আর বাঙালি ৭৫ জন। সার্ভে অফিসার পদে- পশ্চিম পাকিস্তানি ৬৪ জন আর বাঙালি মাত্র ২ জন কর্মরত ছিলেন।
সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও ভয়াবহ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিদের চোখে বাঙালিরা ছিল, খর্বকায়, হালকা-পাতলা-রুগ্ন এবং সাহসী নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩টি জেনারেল পদ, ২০টি মেজর জেনারেলের পদ এবং ৩৪টি ব্রিগেডিয়ারের পদের সবকটিতেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা আসীন ছিলেন। কর্নেল পদেÑ পশ্চিম পাকিস্তানি ছিল ৪৯ জন এবং বাঙালি মাত্র একজন। লে. কর্নেল পদে পশ্চিম পাকিস্তানি ১৯৮ জন আর বাঙালি ২ জন। মেজর পদে- পশ্চিম পাকিস্তানি ৫৯০ জন আর বাঙালি ছিলেন ১০ জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীর ৬শ পদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি ৫৯৩ জন এবং বাঙালি ছিলেন ৭ জন। অন্যদিকে বিমানবাহিনীর ৬৪০টি পদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি ৬শ পদে আর বাঙালিরা ৪০টি পদে আসীন ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান স্থাপনেও পূর্ববাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভয়াবহ বৈষম্য ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ৬টি আর পূর্ববাংলায় একটি। প্রকৌশল কলেজ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে ৩টি আর পূর্ব বাংলায় একটি। বিশ্ববিদ্যালয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে ৪টি আর পূর্ববাংলায় ২টি। কলেজ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে ৭৬টি আর পূর্ববাংলায় ৫৬টি। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রাইমারি স্কুল ছিল ৬ হাজার ২৪৬টি আর পূর্ববাংলায় ২ হাজার ২১৭টি। হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে ১৭ হাজার ৬১৪টি আর পূর্ব বাংলায় ৫ হাজার ৫১৫টি। চিকিৎসক ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে ৫ হাজার ৫শ আর পূর্ববাংলায় ৩ হাজার ৩৯৩ জন। পশ্চিম পাকিস্তানে মাতৃসদন ছিল ১১৮টি আর পূর্ব বাংলায় ২২টি।