বাংলাদেশের ভারতপন্থি হওয়ার ধারণা কেবলই ভুল : রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান
মমিনুল ইসলাম : গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ হামলায় জড়িতরা সবাই বাংলাদেশি। এ হামলার পেছনে একজন পাকিস্তানিও নেই বলে জানিয়েছেন ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান। পাকিস্তানি পত্রিকা ‘ডেইলি টাইমস’কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে একথা জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হামলায় দেশের বাইরে থেকে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হয়েছে। এতে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাক ট্রিবিউন।
বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতপন্থি এমন উপলব্ধি কেবলই ভুল। আমরা বাংলাদেশপন্থি। আমাদের ভারতের প্রতি অস্বাভাবিক আনুকূল্যতা নেই। আমরা সব দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরি করতে চাই। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ সীমানা থাকায় তাদের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।’
পাকিস্তানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সফরের সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা বলেন তারিক। রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী। কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতা নি¤œপর্যায়ে ছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলার পক্ষে। কিন্তু এটা নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। গত বছর বাংলাদেশি নারী ক্রিকেট দলের পাকিস্তানে খেলার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রায় সাত মাস আগে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক অবনতির পর্যায়ে ছিল। ‘আঘাতের বদলে আঘাত নীতি’তে একে অপরের কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। তবে এ সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। বলেন, ‘আগামী দিনে দুদেশের মধ্যকার বৃহত্তর মিথস্ক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। যা বৃহত্তর সমঝোতা ও সহযোগিতায় অবদান রাখবে।’
বাংলাদেশে বসবাসরত বিহারি বাসিন্দাদের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হচ্ছেÑ এমন অভিযোগের উত্তরে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে আটকেপড়া বিহারিদের (পাকিস্তানি) ৪৫ বছর যাবত গ্রহণ করে আসছে। বাংলাদেশ একটি অতিথিপরায়ণ দেশ। আটকেপড়া পাকিস্তানিরা বাংলাদেশে শান্তি ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করছে। এখানে তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার নিয়ে কোনো প্রশ্নই নেই। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ভালো আচরণ পাওয়ায় আটকেপড়া বেশিরভাগ পাকিস্তানি এখানেই থাকতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান। তিনি জানান, ২০১৬ সালের জুনে বাংলাদেশ পাকিস্তানে মাত্র ৪৭ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তানের রপ্তানি অনেক বেশি। তাই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পাকিস্তানের পক্ষে রয়েছে। তবে দুদেশের রপ্তানি ও আমদানির মধ্যে কিছুটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। এছাড়া বাণিজ্যের বহুমুখীকরণও প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বাণিজ্য পরিমাণ প্রতিযোগিতামূলক। নিবিড় যোগাযোগ ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের দুদেশের মধ্যে যাতায়াত বাণিজ্য পরিপূরকের অনেক ক্ষেত্র প্রকাশ করতে পারে। যেখানে বাণিজ্য আরও বাড়বে। সবশেষে তিনি দুদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বিনিময় ও এক দেশে অন্য দেশের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন কোম্পানির অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেন।
তারিক বলেন, আমি দুদেশের শীর্ষ চেম্বার সংস্থার মধ্যকার ‘জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল’ পুনরায় জীবিত করার চেষ্টা করব। বাণিজ্য প্রক্রিয়ায় জাহাজ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। আমি চট্টগ্রাম ও করাচির মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল চালু করার জন্য চেষ্টা করব। অশুল্ক বাধা দূর করতে বাংলাদেশ দ্রুত কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। পাশাপাশি, পাকিস্তানি বাজারে নির্দিষ্ট কিছু বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকার প্রত্যাশা করেন। দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক সন্তোষজনক ও প্রতিশ্রুতিশীল বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ