ব্যাচেলর মেস ছাড়া ছাত্রী হোস্টেলও নজরদারিতে জঙ্গিবাদে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়ছে
কালাম আজাদ : বিশ্বজুড়ে যখন জঙ্গিবাদের ডামাঢোল, ঠিক সে সময়ে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশের মাটিও। হামলার শিকার হচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতোদিন এই জঙ্গিবাদে পুরুষদের আটক ও গ্রেফতার করা হলেও বেশ কিছুদিন ধরে নারীদেরকেও আটক করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ হেফাজতে তারা নানা বিষয়ে মুখও খুলছেন। স্বীকার করছেন জঙ্গিবাদের কথা। চলতি মাসেই ইডেন কলেজ ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মোট ৮ ছাত্রীকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহে আটক হন আরও এক নারী। কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জেএমবি (জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) সন্দেহে তিন নারীকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে চারজন, নরসিংদীতে একজন ও ঝিনাইদহে আরও এক নারী আটকের খবর জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবমিলিয়ে এখন ব্যাচেলর মেস ছাড়াও ছাত্রী হোস্টেলের দিকেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ছে বলে জানা গেছে।
নারী জঙ্গিদের আটক ও শনাক্তের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় নারীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা শনাক্ত করা মুশকিল। তবে আমাদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর থাকার কারণে সন্দেহভাজন নারীদের কার্যক্রমও নজরদারিতে রয়েছে। এর ফল হিসাবে সম্প্রতি বেশকয়েকজন নারীকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, জঙ্গিরা যখন সমাজে নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তখন কার্য হাসিলের জন্য তারা নারী উইংকে ব্যবহার করছে।
সূত্রমতে, ২০১৪ সালের শেষের দিকে ভারতে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাকারী এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়। দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের খবরে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার ছক অনুযায়ী অস্ত্রও সংগ্রহ করেছিলেন ওই নারী। একইসঙ্গে বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থানেরও পরিকল্পনা ছিল ওই নারীর। গত ৫ জুলাই টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে জেএমবি সন্দেহে তিন নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নারী সদস্যরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। আটককৃত ওই তিন নারী হলেন- রোজিনা বেগম, সাজিদা আক্তার ও জান্নাতি ওরফে জেমি।
গত ২৫ জুলাই ইডেন কলেজের হোস্টেল থেকে পাঁচ ছাত্রীকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জঙ্গিযোগের অভিযোগে ছাত্রীদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। আটককৃত ছাত্রীরা হলেন- সাবিহা আফরিন সীমা, উম্মে সালমা রুমা, মাকসুদা খাতুন, নাসরিন সুলতানা এবং ফৌজি আক্তার। গত ২৭ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে জঙ্গিযোগ সন্দেহে আটক করা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের তিন ছাত্রীকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে গত ২৪ জুলাই ভোররাতে সিরাজগঞ্জ শহরের মাছুমপুর মহল্লার উত্তরপাড়ায় হুকুম আলীর ভাড়া বাড়ি থেকে আটক করা হয় চার নারীকে। তাদের হেফাজত থেকে ছয়টি হাতবোমা, গ্রেনেডের চারটি খোল, নয়টি জিহাদি বই, ডেটোনেটর, সুইচ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তারও আগে গুলশান হামলায় সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে নরসিংদী থেকে রুমা আক্তার নামে এক নারীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। গত ২৩ জুলাই গোপন বৈঠককালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আটিয়াতলী এলাকার একটি বাসা থেকে জামায়াতের ১১ নারী সদস্যকে আটক করা হয়। এসবের বাইরে জামায়াতের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারী পাড়ায় অভিযান চালিয়ে জলি খাতুন নামে জামায়াতের এক নারীকর্মীকে আটক করে পুলিশ। তিনি জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। দীর্ঘদিন ওই এলাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম