গুলশান হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তামিমসহ ৫ জঙ্গি ভারতে সরকার পতনের ষড়যন্ত্রকারী নাঈমকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের অনুরোধ
আজাদ হোসেন সুমন ও মবিনুর রহমান : ‘মাস্টারমাইন্ড’ তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর অন্তত পাঁচ সদস্য ভারতে প্রবেশ করেছে বলে সন্দেহ করছে বাংলাদেশ। এই পাঁচ জঙ্গির নামের তালিকা ইতোমধ্যে ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সে দেশে গ্রেফতার জেএমবির শীর্ষ নেতা নুরুল হক ওরফে নাঈমকে ফেরত দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আছে। ভারত সফররত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে সন্দেহভাজন ৫ জেএমবি সদস্যের ব্যাপারে আলোচনা করেন। সেই বৈঠকেই নাঈমকে দেশে ফেরত পাঠানোর এ অনুরোধ জানান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে। এ ব্যাপারে দুইটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলশান হামলার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়ার মতো ভারতীয় রাজ্যগুলোকে সতর্কতায় রাখা হয়েছে। সে সতর্কতার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ জঙ্গির তালিকা ভারতকে দেওয়া হয়। কয়েকদিন আগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) যে ৬৮ জন নিখোঁজের তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে ওই পাঁচজনের নাম রয়েছে। বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী, তারা সবাই জেএমবি’র কর্মী। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ।
পাঁচ সন্দেহভাজনের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক তামিম চৌধুরীও রয়েছেন। তাকে গুলশান হামলার হোতা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী এবং আইএস-এর সঙ্গে তার সংযোগ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
খবরে বলা হয়, তামিম চৌধুরী- আবু ইব্রাহিম আল হানিফ চৌধুরী নামেও পরিচিত। ২০১৬ সালে আইএসের কথিত প্রপাগান্ডা ম্যাগাজিন দাবিক-এ তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল। কানাডা প্রবাসী এই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাগরিক ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সে দেশে গ্রেফতার জেএমবি সদস্য নুরুল হক ওরফে নাঈমকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর কলকাতা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় শাকিল গাজী ও করিম শেখ নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন । এনআইএর দাবি অনুযায়ী তারাও জেএমবির সদস্য ছিলেন। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএর দাখিল করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে হটানোর বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অন্যতম নেপথ্য ব্যক্তি এই নাঈম। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে নাঈমকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে তাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অনুরোধ বিবেচনা করে দেখতে সম্মত হয়েছেন রাজনাথ সিং।
ইন্ডিয়া টাইমস তাদের প্রতিবেদনে আরও প্রকাশ করেছে, এনআইএর জিজ্ঞাসাবাদে নাঈম স্বীকার করেছিলেন, তিনি বাংলাদেশে গিয়ে যাত্রাবাড়ি ও মিরপুরে প্রায় দেড় বছর কাটিয়েছিলেন। সেখানে বশির ওরফে তালহা ও আনিস ওরফে কাউসারের কাছে বোমা তৈরির উপর প্রশিক্ষণ নেন। বশির জেএমবির জ্যেষ্ঠ সদস্য সাইদুর রহমানের ছেলে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম