বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ‘জ’ও থাকবে না : সৈয়দ আশরাফ জঙ্গিবাদে ভয় আছে, ভয় নেই
দীপক চৌধুরী : সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে জঙ্গিবাদ। তাই এখন জঙ্গিবিরোধী প্রচার, সেমিনার, মানববন্ধন, গণমাধ্যম আয়োজিত ‘টকশো’র বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি। নিরাপত্তা গবেষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক- গবেষক, সমাজবিজ্ঞানী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পর্যন্ত সবাই এখন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন অবস্থানের চিত্র উঠে এসেছে ।
একজন নিরাপত্তা গবেষকের মতে, গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মাদ্রাসাপড়–য়া থেকে শুরু করে শহুরে উচ্চবিত্তের একশ্রেণির সন্তানেরা পর্যন্ত কেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে, তা এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও। তারা সন্তানকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পাঠাতেও দোটানায় রয়েছেন। অনেকেই ভয়েও আছেন।
তবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। যতো বাধাই আসুক, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে। জঙ্গিবাদ দূরের কথা, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ‘জ’ও থাকবে না।
গতকাল শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী এক সমাবেশে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিএনপির নেতারাও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা জঙ্গিবিরোধী ঐক্য চান। জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠলেই দেশে এ অপশক্তি আর কিছু করতে পারবে না। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে তারা সরকারের প্রতিও ইতোমধ্যে আহ্বানও জানিয়েছেন। ঐক্যের বিষয়টিকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকার যেকোনো উপায়ে জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভাঙতে চায়। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় জঙ্গিবিরোধী ‘টিম’ গঠন করছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল।
হলি আর্টিজানের পর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার রেশ না কাটতেই গত মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের হামলায় নিহত জঙ্গিদের পরিচয় এ আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখানে নিহত নয়জনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত আটজনের পরিচয় জানা গেছে। একজন আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এসব ঘটনায় পুলিশি অভিযানে নিহত হয়েছেন ১৬ জঙ্গি। হলি আর্টিজানের ঘটনা বাদে বাকি ২টি ঘটনায় একজন করে সন্দেহভাজন জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছেন।
কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযান প্রসঙ্গে নিজের আস্থা ও বিশ্বাস থেকে গত ২৬ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ ধরনের জঙ্গিহামলা রোধ করতে পেরেছি এবং এটি জীবন ও জনগণের সম্পদ রক্ষায় এখন একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশের অভিযানের ফলে দেশে আরেকটি ভয়ঙ্কর জঙ্গিহামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সম্মেলনে অংশ নেওয়া ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও ৮ বিভাগীয় কমিশনারকে ১৯ দফা কাজের দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ জেলায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গড়তে তুলে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একদম তৃণমূল থেকে কমিটি গড়ে তুলে যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত, তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে এরই মধ্যে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে, গুলশানে অননুমোদিত বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ, পদ্মা ও মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, জুমার বয়ানে নজরদারি, দেশের সব মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বয়ান সরবরাহ, ওয়াজ মাহফিলে ধর্মের অপব্যবহার হচ্ছে কী-না দেখা, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরার (এফবিআই) সহযোগিতা করছে। এছাড়া মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের বাংলাদেশ সফর এবং মঙ্গোলিয়ায় আসেম সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশের সন্ত্রাসী-জঙ্গিহামলা। এসব ঘটনা বা বিষয়ই প্রমাণ করে জঙ্গিসন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভাঙতে চাইছি আমরা। ওই মন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে তাদের কৃপায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা পোক্ত অবস্থান তৈরি করলেও আমাদের সরকারের নীতি হচ্ছে এই অশুভ চক্র বাংলাদেশে কখনই আশ্রয় পাবে না।
চলমান জঙ্গি ইস্যু প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা প্রস্তুতির পর আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে তারা এ মুহূর্তেই আর নতুন করে হামলা করতে পারবে না। আমার মনে হয়, তারা এতটা প্রস্তুতও নয়। তবুও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই ছোট করে হলেও এখন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট হয়েছে। আমরা প্রস্তুত। আমরা কাজ করছি।
সৈয়দ আশরাফ গতকাল আরও বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠিত হোক তা আমরা চাই না। দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও দুচারটা ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এতে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, এটা বলা সঠিক নয়।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, যারা ভীতু তারাই গুপ্তহত্যা করে। তারা কাপুরুষ। এ কাপুরুষেরা কোনো যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে না। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম