গোয়েন্দাদের টার্গেট এখন চার শ্রেণির জঙ্গি, এরাই জঙ্গি কর্মকা- করছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : জঙ্গিবাদ নির্মূলে গোয়েন্দাদের টার্গেট এখন চার শ্রেণির জঙ্গি। যাদের বয়স ১৫-৩০ এরমধ্যে। এর মধ্যে তিনটি গ্রুপ রয়েছে বিশেষ ক্যাটাগরিতে। এই তিন শ্রেণির মধ্যে রয়েছে রেডিকেল ইয়ূথ, ফরেন ফাইটার ও মিসিং। এছাড়াও আরও একটি গ্রুপকে তারা সম্প্রতি টার্গেট করেছে তারা হলো জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের পর আদালতের জামিন নিয়ে বের হয়ে আসার।
গোয়েন্দারা সরকারকে পরামর্শ দিতে যাচ্ছেন যারা সরাসরি জঙ্গি কর্মকা-ে জড়িত ওইসব জঙ্গিকে একবার ধরা সম্ভব হলে তাকে কোনোভাবেই জামিন দেওয়া যাবে না। ওইসব জঙ্গি যদি জামিনে বের হয়ে আসে তাহলে তাদের আরও বেশি জঙ্গি কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তাই জামিন পাওয়ার সুযোগ রাখা যাবে না।
সূত্র আরও জানায়, জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সরাসরি বিদেশ থেকে আনা অর্থ জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে ব্যবহার করেছেন। বিদেশে অবস্থান করা হামজা ব্রিগেডের সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংলাদেশ সফর করে ওই ব্যক্তিদের টাকা দিয়েছেন। তাদেরকে সহায়তা করতে বলেছেন। সেই রকম অর্থ লেনদেন হওয়ার প্রমাণ পাওয়ার পর এবং জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করার পরও সম্প্রতি একজন গত বছর দুজন জামিনে বের হয়ে এসেছে। তারা বাইরে এসে তাদের সব কর্মকা- বন্ধ করে দিয়েছেন এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। আদালত যদি তাদের জামিন না দিত তাহলে এই ধরনের কর্মকা-ের বিস্তার কমতো।
সূত্র জানায়, জঙ্গিবাদে কর্মকা-ের বিস্তার ও সাম্প্রতিককালের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে চার ধরনের ব্যক্তিদের জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা আরও বড় পরিকল্পনা করছে। এরমধ্যে রেডিকেল ইয়ূথ ছিল গোয়েন্দাদের মূল টার্গেট। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর বাইরেও রয়েছে মিসিং যারা। সমাজের অনেক পরিবারেই রয়েছে নানা রকম সমস্যা। বিশেষ করে উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণদের অভিভাবকরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ওইসব কিশোর-তরুণরা অভিভাবকের কথা অমান্য করেই ঘর ছাড়ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা মাদক ও শহিদ হওয়ার নেশায় এবং বেহেশত পাবে সেই আশায় তারা ঘর ছেড়ে জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হচ্ছে। বাসা থেকে বের হয়ে তারা গোপনে ট্রেনিং নিচ্ছে। এরপর তারা বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করছে। এই মিসিং ব্যক্তিদের অবস্থা নিশ্চিত জানার জন্য চেষ্টা চলছে।
এছাড়াও টার্গেট রয়েছে ফরেন ফাইটার। তারা হলো এমন একটি শ্রেণি যারা আইএস এর প্ররোচনায় দেশ ছেড়েছে। বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এরপর কেউ কেউ সিরিয়াতে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে কিংবা যুদ্ধের কিছু কিছু কাজে সহায়তা করছে। পরে তারা সিরিয়া ছেড়ে অন্যত্র গেছে।
সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজানের ঘটনায় এই পর্যন্ত যতখানি তথ্য জানা গেছে এরমধ্যে তিনজন রেডিকেল ফোর্সের সদস্য। আর তিনজন মিসিং। গুলশানের ঘটনার পর যাদেরকে সন্দেহজনকভাবে দেখা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওইসব তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যদের ধরার জন্য গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানায়, ফাইটার গ্রুপও আমাদের টার্গেটে রয়েছে, তবে এখনো আমরা বাংলাদেশে এমন পাইনি যারা বিদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ফাইটিং ফোর্সের সদস্য হয়েছিল ও কাজ করেছে। তবে আমরা যদি নিশ্চিত হতে পারি যে, তারা এসেছে তাহলে বড় ধরনের হামলা করার জন্য পরিকল্পনা করছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এখনো মনে করি সিরিয়ার যুদ্ধের মাঠে যুদ্ধ করেছে এমনটি এখনো মনে করা হচ্ছে না। তবে সহায়তা করছে এমন খবর আসছে। ওই শ্রেণি দেশে ফিরে হামলা করতে পারে এই ধরনের খবর আমাদের কাছে এসেছে। এই জন্য অনুসন্ধান চলছে। তাদেরকে খুঁেজ বের করার চেষ্টা চলছে।
এছাড়াও জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে জড়িত ও যারা অর্থায়ন করছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা জামিনে বাইরে বের হয়ে এসেছে তাদের উপর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম