বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ভেঙে পড়ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা
কালাম আজাদ : উত্তরাঞ্চলে বন্্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা। একই সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বন্যায় রৌমারী স্থলবন্দর ও সীমান্ত হাটও তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় চাল, নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ও জরুরি সাড়াদান কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক এম খলিল মাহমুদ বলেন, গত শুক্রবার পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬ জেলায় ৬ হাজার ৬শ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২ কোটি ১০ লাখ টাকার খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত হয়েছে ১৬ জেলার ৫৯ উপজেলা। জেলাগুলোর ৩০৯টি ্ইউনিয়নের মোট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৬টি। বন্যাকবলিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৫ জন। বন্যায় মোট ৯ হাজার ৯১৪টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘরবাড়ির সংখ্যা ১২ হাজার ৩৭১টি। বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ২৬টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৮৮টি। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬৯টি। এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট আশ্রিত লোকসংখ্যা ৭ হাজার ৩৭৫ জন।
জানা গেছে, বর্তমানে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার, পদ্মা, ঘাঘট, করতোয়া এবং সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ১৭টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল রোববার কুড়িগ্রামের রাস্তা ভেঙে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার কারণে শিমুলিয়া কাওরাকান্দি ফেরি চলাচল এখনও স্বাভাবিক হয়নি। প্রবল স্রোতের কারণে ফেরিগুলো এখনও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া বন্যা পরিস্থিতির কারণে উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু এলাকায় ট্রেনও চলাচল করতে পারছে না। পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে।
অপরদিকে মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। লৌহজং উপজেলা কলমা ইউনিয়নে ডহরী,শামুরবাড়ি, কনকশার, যশলদিয়া, কান্দিপাড়া, টঙ্গীবাড়ি হাসাইল, বানারী, পাঁচনখোলা, নগরযোয়ার, পাঁচগাঁও, কামারখাড়া ও শ্রীনগর উপজেলার কবুতরখোলাসহ পদ্মা তীরের গ্রাম এবং চার এলাকায় গ্রামগুলো এখন বন্যাকবলিত। পদ্মা ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল জানান, পদ্মার এই পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এতে অনেক শিক্ষালয় জলমগ্ন হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ার সময় দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। সম্পাদনা : সৈয়দ নূর-ই-আলম