মুক্তি মিলেছে বাংলাদেশে
গাজী মিরান : বাংলাদেশের সঙ্গে এক বছর আগে যুক্ত হয় ভারতের ১১১টি সাবেক ছিটমহলবাসী নিজেরা মুক্তি পেয়েছেন বলে মনে করছেন। যারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে শুরু করেছেন তখন থেকেই। কিন্তু এই ১ বছরে সাবেক ছিটমহলগুলোতে মানুষের জীবনে কি পরিবর্তন এসেছে? কতটা প্রভাব ফেলেছে সেই পরিবর্তন? এবং তাদের প্রত্যাশা কতটাই বা পূরণ হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে।
সাবেক ছিটমহলগুলোর অন্যতম দাসিয়াছড়ায় কখনই স্কুল ছিল না। সেখানে এখন ছিটমহলবাসীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুবিধার্থে ৩টি স্কুল নির্মাণের কাজ চলছে।
বড় একটি পরিবর্তন এসেছে আর সেটা হলো বিদ্যুৎ। বর্তমানে সেখানে প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বলছে বিদ্যুতের বাতি। যা ছিল তাদের এক সময়ের কল্পনা।
সাবেক ছিটমহলবাসী বলেন, আমরা বাংলাদেশি মানুষের মতই শিক্ষা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। মোট কথা আমরা আগে অন্ধকারে ছিলাম এখন আলোতে এসেছি।
তারা আরও বলেন, আমাদের গ্রামের প্রধান রাস্তাটি এখন আর মাটির নেই সেখানে ইট বিছানো হয়েছে। যদিও ঐ ইট বিছানো রাস্তাটি ছাড়া এলাকার বাকি রাস্তাগুলো এখনো আগের মতই মাটিরই আছে।
বাংলাদেশের সাথে যুক্ত হওয়া সাবেক এই ছিটমহলটি আয়তনে ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়। তাই এলাকাবাসীর দাবি ছিল আলাদা ১টি ইউনিয়ন করার। তবে সে দাবি থাকলেও সাবেক এই ছিটমহলটি এখন পাশের ৩টি উপজেলার অংশ হয়েছে। এবং তাদের স্কুল, হাসপাতাল করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সপ্তাহে ৬দিনই প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে।
তবে স্বল্প পরিসরে পরিবর্তন সেটা কতটা প্রভাব ফেলেছে এখানকার মানুষের জীবনে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ছিটমহলবাসি বলেন, এখানে আমাদের জীবন যাপনের জন্য সব সুবিধাই রয়েছে, আমরা এতেই খুশি।
১ বছর আগে যে প্রত্যাশা নিয়ে এখানকার মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাদের সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এলাকাবাসি বলেন, আমরা ব্যবসা করি এবং ব্যবসায় অনেক লাভ হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের ছেলে-মেয়েদের মানুষ করার জন্য স্কুল হয়েছে। এবং এখানকার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। এক কথায় আমরা অনেক কিছু পেয়েছি বাংলাদেশে এসে।
তারা আরও বলেন, আমাদের একটা পরিচয় হলো আমরা নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারছি। এবং আমরা ইতিমধ্যে শুনতে পেরেছি যে, এখানে আরও কিছু উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান করার জন্য বাজেট করা হয়েছে। হয়তো সেই সুবিধাটাও আমরা আস্তে আস্তে পাব বলে আশা করি।
পরিবর্তন হচ্ছে আস্তে ধীরে, তাই নাগরিক সুযোগ সুবিধার অনেক কিছুই এখানে এসে পৌঁছায়নি। তবে বাহিরের পরিবর্তনের চেয়েও বেশি পরিবর্তন এসেছে এখনকার মানুষের আত্মবিশ্বাস। ৬৮ বছর পর একটি দেশের নাগরিক পরিচয় দিতে পেরে যেন এক বছরে ধরে স্বস্তিতে রয়েছেন এখানকার মানুষ। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ