
ডাস্টবিনে পাওয়া শিশু আয়ানের নতুন ঠিকানা শিশুমনি নিবাসকেন্দ্র
রিকু আমির : শিশু আয়ান আফরাজের নতুন ঠিকানা এখন সমাজসেবা অধিদফতরাধীন ‘শিশুমনি নিবাসকেন্দ্র’। যে আয়ানকে গত ১০ জুলাই বাড্ডার একটি ডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে এনে দিয়েছিল পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান হাসপাতাল থেকে আয়ানকে ছাড়পত্রসহ শিশুমনি নিবাস কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন। এসময় একদিকে তৈরি হয় আনন্দঘন পরিবেশ অন্যদিকে তৈরি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ঢাকা মেডিকেল সংশ্লিষ্টদের চোখে মুখে আনন্দের পাশাপাশি স্থান পায় বিষাদ। আর ছোটমনি নিবাসের কর্মকর্তারা ভাসছিলেন আনন্দে।
জ্বর এবং নানা জটিল ইনফেকশনে আক্রান্ত আয়ানকে গুরুতর অসুস্থ থাকায় লম্বা সময় নবজাতক কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছিল। তার জন্য গঠন করা হয়েছিল একটি মেডিকেল বোর্ড। এর প্রধান ছিলেন-ঢাকা মেডিকেলের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মনীষা ব্যানার্জী। সদস্য ছিলেন- ঢাকা মেডিকেলের শিশু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান সাঈদা আনোয়ার, নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তোফাজ্জ্বল হোসেন খান। চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম একসময় নাম-পরিচয়হীন শিশুর ভাগ্যে নাম জুটে ‘আয়ান আফরাজ’। সে নামেই দিন কাটতে থাকে তার।
গত কয়েকদিন ধরেই সে মুখে খাবার নিচ্ছিলো জানিয়ে ঢাকা মেডিকেলের নবজাতক বিভাগের প্রধান মনীষা ব্যানার্জী বলেন, শিশুটি দীর্ঘ ২৩ দিন আমাদের কাছে ছিল। সে খুবই অসুস্থ ছিল। তার সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। একটি টিম হিসেবে সবাই মিলে আমরা কাজ করেছি। আমাদের খুব সুখী লাগছে, আজ একটি সুস্থ শিশু হিসেবে তাকে সমাজসেবা অধিদফতরের শিশুনিবাসে হস্তান্তর করতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই মন খারাপ করছেন। কিন্তু তাকে তো আমরা রেখে দিতে পারতাম না। বরং তাকে সুস্থ করতে পেরেছি। একটা নির্ভরযোগ্য স্থানে সে মাতৃ¯েœহে বড় হবে, এটাই তো আমারদের চাওয়া ছিল। সেখান থেকে সে আরও নির্দিষ্ট একটি ঠিকানা পাবে, সেটাই এখন আমাদের কামনা।
মনীষা ব্যানার্জী বলেন, এই শিশুটিকে নিশ্চয় একজন মানুষ সে মা কিংবা বাবা হোক ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে গিয়েছিলেন। তাকেই আবার একজন মানুষ তুলে এনেছেন। আমরা আন্তরিকতা দিয়ে তাকে এখন সুস্থ করে তুলেছি; এর চেয়ে বড় সার্থকতা আর কী হতে পারে?
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. মিজানুর রহমান বলেন, একসময় শিশুটির বেঁচে থাকার আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছিলাম। শিশুটির জ্বর আর রক্তে ইনফেকশন ছিল। ইনফেকশনের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, তাকে দিনে তিনটি করেও অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আর চিকিৎসকসহ সবার আন্তরিক চেষ্টায় শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, একটি মানবপ্রাণ রক্ষা করা গেল। এখন শিশুটিকে শিশুমনি নিবাসে হস্তান্তর করা হচ্ছে। অনেক মানুষ শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অধ্যাপক এমন কী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছেন এ তালিকায়। কিন্তু আমরা হাসপাতাল থেকে সরাসরি দত্তক দিতে পারি না। কেউ যদি দত্তক নিতে চান, তাহলে তাকে উপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গিয়ে দত্তক নিতে হবে।
সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে থাকা শিশুমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক বিলকিস বেগম বলেন, আমরা আয়ানের মতো এমন অনেক শিশুকে শিশুমনি নিবাসে নিয়ে রেখেছি। তাদেরকে মায়ের মতো আন্তরিকতা দিয়ে বড় করার চেষ্টা করি। আয়ানও তার ব্যতিক্রম হবে না।
যারা এই শিশুটিকে দত্তক নিতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বিলকিস বেগম বলেন, দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কেউ ইচ্ছে করলেই শিশু দত্তক নিতে পারেন না। পারিবারিক আদালতে গার্ডিয়ানশিপ নিতে আগ্রহীকে মামলা করতে হবে। মামলার রায় হলে তিনি শিশুনিবাসে আসবেন কপি নিয়ে। আমরা তখন অধিদফতরের পরিচালকের কাছে আবেদন করলে তিনি বিষয়টির মিমাংসা করবেন। তিনি যদি অনুমোদন দেন তাহলে শিশুটিকে দত্তক নেওয়া যাবে। আর এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই অনেক পরিবার অনেক শিশুকে দত্তক নিয়ে থাকেন। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি
