
কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্বচ্ছ কাচের জন্য বন্দিরা স্বজনদের দেখতে পারছেন না
ইসমাঈল হুসাইন ইমু, কেরানীগঞ্জ থেকে ফিরে : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে প্রতিদিন ৩২ জন বন্দি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন। প্রতিদিন কয়েকশ ব্যক্তি বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে এলেও তারা ফেরত যাচ্ছেন দেখা না করে। অন্যদিকে যারা দেখা করতে যান তারাও বন্দির সঙ্গে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারছেন না। চেহারা দেখতে পারছেন না অস্বচ্ছ কাচের জন্য। পুরান ঢাকার কারাগারে দর্শনার্থীরা একসঙ্গে দেড়শ জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতো। তবে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা স্বজনরা জনিয়েছেন, আগের কারাগারে দেখা করতে ২০০ থেকে৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হতো। এখন অবশ্য কেউ ঘুষ নিচ্ছে না। তাদের ধারণা নতুন ব্যবস্থায় এখনো ঘুষটি চালু হয়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, কাচের উপর প্লাস্টিকের নতুন প্রলেপের কারণে চেহারা পরিষ্কার নয়। এছাড়াও কারারক্ষীদের হাতে স্বজনদের নাম-ঠিকানা দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে অনেককে। দর্শনার্থীরা বলছেন, অনেক ভিড় ঠেলে পুরান ঢাকার কারাগারে গিয়ে তাদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন অনায়াসেই। তারা আশা করেছিলেন বড় এ কারাগারে আরও বেশি সুবিধা পাবেন। কিন্তু এখানে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকায় বাসা থেকে আনা খাবারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে দু-একজন দর্শনার্থী তাদের স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, তাদের স্বজন ভালোই আছে। সেলের মধ্যে অনেক আলো-বাতাস রয়েছে। গরমের মধ্যে বাইরে দাঁড়ানো খুবই কষ্টকর। এরপরও কয়েকশ লোককে তাদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, সাক্ষাতের কক্ষে কাচে থাকা প্লাস্টিকের প্রলেপ তুলে ফেলা হবে। ওটা পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছিল। সাক্ষাতের জায়াগাটা একটু ছোট হয়ে গেছে। তবে আগামী দু-এক মাসের মধ্যে একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যাও কিছুটা রয়েছে। সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। প্রথমাবস্থায় একটু সমস্যাতো হবেই। তবে সবকিছু মেনে নিয়ে পুরোদমে কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, রান্না-বান্নায়ও সমস্যা হচ্ছে। একসঙ্গে ৭ হাজার বন্দি অর্থাৎ ২১ হাজার লোকের (তিন বেলা) খাবার তৈরি করতে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার পরিবেশন করা যাচ্ছে না। গ্যাসের চুলা না থাকায় এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে ৩৫টি চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্নার কাজ চলছে। বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদের বানানো চুলায় দ্রুত রান্না করা যাচ্ছে না। তাই সাধারণ চুলা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কারাগারের জেলার নেছার আলম বলেন, শুক্রবার থেকে বন্দি স্থানান্তরের পর থেকে কোনো কর্মকর্তাই ভালো করে ঘুমাতে পারেননি। সবকিছু গোছাতে সময় লাগছে। দর্শনার্থী ও বন্দিদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তাদের সুবিধা আগে দেখা হচ্ছে।
নতুন কারাগারে জেলার ও জেল সুপারের কক্ষে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভোগান্তি রয়েছে কারাগারের বাইরে। আশাপাশে কোনো গাছপালা না থাকায় রোদের মধ্যে বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করছে মানুষ। কারা বেকারি ও দোকানপাট না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে শুকনো খাবার কিনে আনছেন।
কয়েকজন কারারক্ষী জানান, গেটের সামনে ছাদ থাকায় রোদের আঁচ লাগছে না। যারা বাইরে ডিউটি করছে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। বেশিক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে ডিউটি করা খুবই কষ্টকর। এছাড়া তাদের আবাসন সমস্যা এখনো কাটেনি। বেশকিছু কারারক্ষীর আবাসন ব্যবস্থা হলেও বেশিরভাগ ঢাকা থেকে এসে ডিউটি করছেন। ঢাকায় যারা পরিবার নিয়ে থাকতেন তারা পড়েছেন বিপাকে। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে পড়াশোনা করে। এখানে কোনো স্কুল না থাকায় তাদের আনাও যাচ্ছে না। বন্দিদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও কোনো হাসপাতাল নির্মাণ হয়নি এই কারাগারে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি
