হুমায়ুন আইয়ুব
আমরা মাথার চুল কেটে ফেলেই দিই সাধারণত। নারীরাও ঝেরে ফেলে মাথার চুল। সম্প্রতি ফেলে দেওয়া চুল ঘিরে গড়ে ওঠেছে শিল্প-কারখানা। বিদেশে চুল রপ্তানি করে আয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা, বিশেষ করে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাদারীপুর ও উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রংপুরসহ অনেক জেলায়ই গড়ে উঠেছে চুলশিল্প।
ইপিবি সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে চুল রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার টাকার। ২০১৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে চুল রপ্তানি হয়েছে ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকার।
চুল বাণিজ্যের এই যখন অবস্থা; তখন ভাবনায় ফেলে দেয় দেশের শীর্ষ মুফতিদের মতামত। কারণ তারা বলছেন, মুসলিমদের জন্য চুল-বেচা কেনা বৈধ নয়। আল-কাউসার তত্ত্বাবধায়ক, মুফতি আবদুল মালেক বলেন, মানুষকে যেমন আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত বানিয়েছেন তেমনিভাবে মানুষের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি চুল-নখের কর্তিত অংশও সম্মানিত এবং এগুলো বিক্রয়যোগ্য কোনো বস্তু নয়। সুতরাং এগুলো বিক্রি করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, অনেক এলাকায় দেখা যায় ফেরিওয়ালারা বাড়িবাডি ঘুরে ঘুরে মহিলাদের জমানো চুল ক্রয় করেন। আর নারীরাও অজ্ঞতাবশত চুল বিক্রি করেন। এটি একটি নাজায়েজ কাজ, এ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। মানুষের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কোনো অংশ বিক্রি করা জায়েজ নয়। চুল কাটার পর (সম্ভব হলে) মাটিতে দাফন করে দেওয়াই উত্তম।
তবে চুল বেচা-কেনার বিষয়টি অপরাধের দিক থেকে হালকাভাবে দেখছেন ঢাকার কুড়িলের শেখ যাকারিয়ার রহ. মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ। তিনি বলেন, শরীরের অঙ্গ দুই প্রকার। এক. স্থায়ী যেমনÑ মাথা, চক্ষু ও কিডনি। দুই. উৎপাদনশীল যেমনÑ রক্ত, দুধ বা চুল। স্থায়ী অঙ্গের বেচা-কেনা নিশ্চয় হারাম। তবে উৎপাদনশীল অঙ্গের বেচা-কেনা যেমন- রক্ত, দুধ বা চুলের বিষয়ে ফেকাহবিদদের অভিমত হলো মাকরুহ। কারণ কুরআন বলছে, ওয়ালাকাদ কাররামনা বানি আদামা, আমি মানুষকে মর্যাদাশীল করেছি। সম্মান দিয়েছি। আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানের অপমাণ হয় যখন মানুষের অঙ্গকে সাধারণ পণ্য বানিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। হোক সেটা চুল কিংবা নখ। তাই মানুষের সম্মান রক্ষার জন্য উচিত হবে, কোনো অঙ্গকেই পণ্য না বানানো।