
শহীদের মৃত্যুদ- বহাল খালাস পেলেন চারজন
এস এম নূর মোহাম্মদ : ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমানকে হত্যার ঘটনায় একজনের মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। খালাস দেওয়া হয়েছে বাকি চারজনকে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আসামি শহীদুল ইসলামের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে। যিনি শাজনীনদের বাড়ির পরিচারক ছিলেন। এছাড়া ঠিকাদার সৈয়দ সাজ্জাদ মইনুদ্দিন হাসান, হাসানের সহকারী বাদল এবং গৃহপরিচারিকা দুই বোন এস্তেমা খাতুন (মিনু) ও পারভীনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। পাঁচজনের সবাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাজাহান বলেন, ন্যায়বিচার পেয়েছি। ওই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। আপিল বিভাগ আজ একটি মামলার রায় দিয়েছেন। যে মামলাটি করেছিল পুলিশ বাদী হয়ে। আর জজ আদালতে থাকা অন্য মামলাটি বাতিল করেছেন আদালত। কারণ একটি ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। তবে বাদী পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে আলোচনা করে খালাসের বিরুদ্ধে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেব।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে গুলশানে নিজ বাড়িতে খুন হন স্কলাস্টিকা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী শাজনীন। এ ঘটনায় লতিফুর রহমান গুলশান থানায় দ-বিধির ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করে সিআইডি। তদন্ত শেষে প্রথম মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-১ এবং দ্বিতীয় মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুটি মামলাতেই আদালত অভিযোগ গঠন করেন।
পরে দুটি মামলারই অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামিরা। ১৯৯৯ সালের ৬ জুলাই হাইকোর্ট তার রায়ে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের আদালতে বিচারাধীন হত্যা মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। কারণ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ইতোমধ্যে আসামিদের খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বিচারাধীন ধর্ষণ ও হত্যা মামলাটির কার্যক্রম চলবে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল বিভাগে গেলে তাদের আবেদন খারিজ করা হয়। এরপর বিচারিক কাজ শেষে ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী রহমতউল্লাহ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার জন্য ছয়জনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। এর পর আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য আসে হাইকোর্টে।
শুনানি শেষে ২০০৬ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শনিরাম ম-লকে খালাস দিলেও বাকি পাঁচজনের মৃত্যুদ- বহাল থাকে। সর্বশেষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আসামিরা। শুনানি শেষে গতকাল যার রায় দেওয়া হয়।
আপিল বিভাগে আসামিপক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান। বাদীপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, এ এম আমিন উদ্দিন ও এ এস এম আবদুল মোবিন। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি
