
মধ্যাঞ্চলে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি
নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরের বেশ কয়েকটি জেলার পর এবার বন্যার বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে দেশের মধ্যাঞ্চলে। রাজধানী ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোতেও পানি বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বেশ কয়েক বছর পর এবার বড় একটি বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্গত অঞ্চলে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে প্রবলভাবে। সরকারিভাবে পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মেদ বলেন, মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এ অবস্থায় ওই সকল মানুষের বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছে।
দেশের বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-
কুড়িগ্রাম : নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঘরে ফিরতে পারছেন না চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বন্যাদুর্গতরা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২২ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা : ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে গোটা ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বর এবং কাতলামারির ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখনো বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। তিন সপ্তাহের দীর্ঘায়িত বন্যায় ৪টি উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের বন্যা কবলিত মানুষ শুকনো খাবার, জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা, গবাদি পশু সংরক্ষণ, গবাদি পশুর খাদ্যসহ নানা সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এদিকে ফুলছড়ি উপজেলার সকল সড়ক বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এবং বাঁধ ও সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণে ওই উপজেলা সদর, সকল ইউনিয়ন ও জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকাই সেখানে চলাচলের একমাত্র বাহন।
ফরিদপুর : পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ ও মধুমতিবেষ্টিত ফরিদপুরের চারটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে পদ্মার পানি গত সোমবারের চেয়ে ৬ সেন্টিমিটার কমে মঙ্গলবার বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য পাটগাছসহ ব্যবহার্য আসবাব। জেলার সদর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা ও সদরপুর এলাকার প্রায় ২০ হাজার পরিবারের দুই লক্ষাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিতরা বেড়িবাঁধ, সড়কের উপরসহ উঁচু জায়গায় অবস্থান করছে।
পিরোজপুর : পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে পিরোজপুরের কাউখালীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে জোয়ারে কচা ও সন্ধ্যা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার নদী তীরবর্তী ৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ১৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের স্রোতের আঘাতে অনেকের ভিটেমাটি সরে যাচ্ছে। এতে বসতঘর পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা। এতে কৃষকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি
