দীপক চৌধুরী : বাংলাদেশের এক নম্বর ইস্যু এখন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস’ এবং দ্বিতীয় বিষয় ‘দুর্নীতি’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনীতির পুরোটা সময় দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সব সময়ই এ দুটো বিষয়ি ছিলেন সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গ্রন্থ, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে জানা যায়Ñ হাজার বছর ধরে চলে আসা অসাম্প্রদায়িক চেতনার এ বাংলায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কোনো স্থান হতে পারে নাÑ এমনটাই মনে করতেন তিনি। ‘ধর্মকে ঢাল হিসেবে’ ব্যবহার করে এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন এদেশের মানুষ সর্বান্তঃকরণে ধর্মপরায়ণ। ‘যার যার ধর্ম তার তার কাছে’Ñ এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী এদেশের সাধারণ মানুষ। আর বঙ্গবন্ধু ঘৃণা করতেন দুর্নীতি করাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজদের নাম ৩ পয়সা মূল্যের পোস্টকার্ডে লিখে তার কাছে পাঠানোর জন্য জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
১৯৫৬ সালে ১৬ সেপ্টেম্বরের কথা। পিরোজপুর শহরের গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে মহকুমা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু এ আহ্বান জানিয়েছিলেন। পিরোজপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মো. জয়নাল আবেদীন মুক্তা ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দফতরের মন্ত্রী তরুণ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আপনারা স্বৈরাচারী, অত্যাচারী ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে আমাকে ঋণী করেছেন। আমি আমৃত্যু সুখে-দুঃখে আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো। তিনি তখন আরও বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে একটি ক্ষমতাসীন দলের (তৎকালীন) এমন পরাজয়ের ঘটনা আর ঘটেনি। কোনো অফিস-আদালতে দুর্নীতি হলে এবং আপনাদের নিকট কেউ ঘুষ চাইলে সঙ্গে সঙ্গে ৩ পয়সার একটি পোস্টকার্ডে লিখে আমাকে জানাবেন। আমি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। যাতে করে কেউ আর দুর্নীতি করার সাহস পায় না এবং চিরদিনের জন্য তা বন্ধ হয়ে যায়।