
একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ জামায়াত সরে গেলে বিএনপির ভোট কমবে না, বরং বাড়বে
শাহানুজ্জামান টিটু : কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আলোচনা সভায় জামায়াত নিয়ে মন্তব্যকে কিছু গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অন্যতম পরামর্শক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন কথা তিনি বলেননি বলেও জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক উপাচার্য। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যে ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবেন- সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। সেখানে আমি কেন হস্তক্ষেপ করতে যাবো? বেগম জিয়া ২০ দল থেকে জামায়াতকে সরিয়ে দিয়েছে এ কথা বলার অধিকার আমার নেই। আমি একজন আত্মসচেতন ব্যক্তি ও শিক্ষক। আমার যে পর্যন্ত অধিকার আছে আমি ওই পর্যন্ত থাকব। এর বাইরে যেতে পারি না। যাওয়ার কথাও না। সুতরাং বেগম জিয়া কী করেছেন কী করবেন দ্যাট ইজ হার ডিউটি, হার অথোরিটি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কাটাবনে নিজ বাসভবনে দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতে তিনি এই দাবি করেন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে আপনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২০ দলের মধ্যে জামায়াতকে আর ওইভাবে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।’ জবাবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমি এ ধরনের কথা বলিনি। আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে। এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমি বলেছি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। এখানে জামায়াত কোনো বিষয় নয়। এর আগেও আমি এ কথাগুলো বলেছি।’
তিনি বলেন, দেশে ১ ও ৭ জুলাই যে সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু হয়েছে এগুলো জাতীয় ও জনস্বার্থে ভয়ঙ্কর মারাত্মক। সুতরাং এই ব্যাপারগুলোকে যেভাবে হোক না কেন আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য বেগম জিয়া একটা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সব দল ও সব মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক যেন একটা ঐক্যমতে পৌঁছায়। যেন সন্ত্রাসী কর্মকা-গুলো প্রতিরোধ করতে পারি। তিনি চাচ্ছেন যে এজন্য একটি জাতীয় ঐক্যের সূচনা করা হোক। জাতীয় ঐক্যের সূচনায় প্রথমে হবে দেশের ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আব্দুর রবের জাসদ, বামদলগুলোর সঙ্গে বসবেন খালেদা জিয়া। বসার ব্যবস্থা হচ্ছে। এই ব্যাপারে সব দলের মধ্যে কারো কারো অভিযোগ আছে- জামায়াত থাকলে ঐক্য হবে না। কিন্তু জামায়াত সর্ম্পকে আমি এটা কোনো নতুন বক্তব্য দিচ্ছি না। এর আগেও আমি বলেছি, তারা যদি (জামায়াত) জাতীয় পর্যায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেদেরকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে তাহলে একটা কথা।
এমাজউদ্দীন বলেন, আমি যেটা বলেছি- বর্তমানে জামায়াতের যারা নেতাকর্মী এদের অনেকের জন্ম ১৯৭১ সালের পরে। দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হলে দেশের যে অবস্থা হবে এ ব্যাপারে তারাও কিন্তু কনর্সান। জাতীয় স্বার্থে, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে যদি মনে হয় (ওরাও দেশের সচেতন নাগরিক) যে আমরা জাতীয় ঐক্যের পক্ষে প্রতিবন্ধক বা বাধা। তখন তারা সরে যেতে পারে। এই একই কথা আজ এবং এর আগেও আমি বলেছি।
বিএনপির সঙ্গে ১৭ বছর জোটগত সর্ম্পক রয়েছে জামায়াতের। সেক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মী এবং যারা দলের পরার্মশক হিসেবে কাজ করছেন, জামায়াত বিষয়ে তাদের মনোভাব কী ধরনের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, ক্ষমতাসীন দল বহু সুযোগ পেয়েছে বিচার করার। বিচারের রায়ও যেমন হয়েছে, তেমন দলটিকে নিষিদ্ধ করা নিয়েও কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারাও অনেক সময় বলেছে- নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু তারা নিষিদ্ধ করছেন না। এটা নিষিদ্ধ করলে তো ব্যাপারটা চুকে যেত। যেহেতু ক্ষমতাসীন দল নিষিদ্ধ করছে না। বিএনপির সঙ্গে অনেকদিন ধরে ছিল একেবারে হঠাৎ করে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া এটাও হয়তো অনেকের কাছে ইনভ্যারেচমেন্টের মতো মনে হয়। এজন্য কারোর ওপর চাপ সৃষ্টি না করে এই ব্যাপারটা তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়াটা ভালো বলে আমি মনে করি।
জামায়াতকে বাদ দিয়ে যে দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য নিয়ে ভাবছে বিএনপি। এসব রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট পার্সেন্টে খুবই কম। জামায়াত সরে গেলে ভোট রাজনীতিতে বিএনপির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে এমাজদ্দীন বলেন, না এখানে প্রভাব পড়বে না বরং ভোট আরো বাড়তে পারে। ভোট বাড়ার সম্ভাবনা আছে এই কারণে যে গত দুই তিনটা নির্বাচনে বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনেও তারা আলাদাভাবে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিএনপির বিরুদ্ধেও ইলেকশন করেছে।
আমরা যাদের সঙ্গে ঐক্য চাচ্ছি সেখানে আমরা ব্যক্তি হিসেবে তাদের দিকে তাকাচ্ছি। তারা ব্যক্তি শুধু নয়, তাদেরকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি। ভোটের হিসেব সবসময় গণনার মধ্যে আনাও ঠিক না। বিএনপির মধ্যে বহু সংখ্যক ব্যক্তি রয়েছেন যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। এই দলের সঙ্গে জামায়াতের এত গভীর সংশ্লিষ্ঠতা কেন থাকবে? এই ধরনের একটা চিন্তা ভাবনা আছে।
জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে ঐক্য করলে বিএনপি আন্তুর্জাতিকভাবে কতটা সহযোগিতা পেতে পারে বলে আপনি মনে করেন- উত্তরে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, অনেকটা বেশি পাবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পষ্টভাবে বলেছে- জামায়াতকে ছাড়তে হবে। জামায়াতকে সঙ্গে রাখা যাবে না। জামায়াতকে নিয়ে সমস্যা তোলে আমাদের প্রতিবেশী ভারত। এই দিক থেকে ভোটের ব্যাপারটা শুধু না, আনুষাঙ্গিক পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোও রয়েছে।
জামায়াতকে বাদ দিলেই কী সরকার বিএনপির দাবি মেনে নেবে বলে মনে করেন? জবাবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, বাদ দিলে সমস্যার সমাধান হবে কি হবে না সেটা ভিন্ন কথা। ওই দিকটা যেতে চাচ্ছি না। এখন জাতীয় ঐক্যের ডাকটাকে আন্দোলনে রূপায়িত করে লক্ষ্যটা ফ্রি-ফেয়ার করে এক্সেপট্যাবল ইলেকশনের দিকে এগুচ্ছি এবং তাতে যদি বিপথগামী তরুণদের সেই পথ থেকে আমরা সরিয়ে আনতে যাই তাহলে সেই আন্দোলনের জন্যই জাতীয় ঐক্যের ডাক। এই ডাকের ফল কতটুকু হবে আল্লাহ জানেন। আমি বলতে পারবো না। জিয়াউর রহমানের বিএনপি-জামায়াত দ্বারা শক্তিশালী হবে এমন চিন্তা আমি অন্তত করি না। তাই বলবো বাস্তবতা উপলব্দি করে জামায়াতকে সরে যাওয়া উচিত এবং এটাই রাজনীতি হওয়া উচিত। সম্পাদনা: এএইচসি
