
নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে নেই কোন সাংস্কৃতিক কর্মকা-
দেলওয়ার হোসাইন : জঙ্গিবাদ নির্মূলে সংস্কৃতি চর্চা বাড়ানোর জোরদার করেছেন সরকার। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ নির্মূলে জন্য মানববন্ধনও হয়েছে। কিন্তু দেশে জঙ্গি তৈরির মোকাম বলে অভিযুক্ত নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সংস্কৃতি চর্চার কার্যক্রম নেই। ছাত্ররা এসি ক্লাস রুমে ক্লাস করে, সঙ্গে স্ক্রিন প্রজেক্টার, লাইব্রেরিতে ৫০ হাজার বই। কিন্তু কোথাও নেই ছাত্রদের কোন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এরজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটেও নেই কোন বরাদ্দ। পড়ানো হয় না, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কোন বিষয়। দেশের ইতিহাস সংস্কৃতি নিয়েও নেই কোন চর্চা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সংস্কৃতি কর্মকা- হয় না। শোকের মাস আগস্টের জন্যও এখনো কোন কর্মসূচি পালন করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মানের ২২টি ইন্টারনেটভিত্তিক ক্লাব রয়েছে। এ ক্লাবগুলোতে নানা ধরনের কম্পিউটার কার্যক্রম হয়।
এছাড়া দেশের সাম্প্রতিক এ ঘটনায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমের চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখার প্রত্যয়ে গত সোমবার ক্যাম্পাসে জড়ো হয়। গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে নিজেদের পরিচয়কে তুলে ধরার প্রয়াশে ‘নর্থ সাউথ এর বুকে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেরদের সংহতি প্রকাশ করে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আতিকুল ইসলাম বলেন, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নিজ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সদা সচেতন। উল্লেখযোগ্য দিবস যেমন বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ বিভিন্ন পালা পার্বণে অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে যার প্রতিফলন ঘটে। একজন শিক্ষক হিসাবে আমি খুব গর্ববোধ করি যখন দেখি এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশি চেতনাকে সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়। আমার শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশের প্রতি ভালোবসা ও শ্রদ্ধাবোধ দেখে আমি আজকে আনন্দিত ও গর্বিত।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন বিদেশি শিক্ষকের মধ্যে ১০ জনের বৈধ কাগজপত্র নেই। পাকিস্তানে ১০ ও মদ্যপ্রাচ্যের ১৩ ছাত্রও রয়েছে পুলিশের সন্দেহের তালিকায়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্র নিবরাস ইসলাম, গত ১ জুলাই গুলশান হামলার অন্যতম জঙ্গি। কমান্ডোর গুলিতে নিহত হতেই তার বাবা-মায়ের অসহায় আর্তনাদ। এটা কেমন করে হলো। এ সবের বিন্দুবিসর্গ তারা জানতেন না। নিবরাসের মগজ ধোলাইয়ের জন্য দায়ী করা হচ্ছে তার বিভাগেরই শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমকে। ব্লগার রাজীব হত্যায় যুক্ত সাত শিক্ষার্থী আগেই বহিষ্কৃত। তারপর থেকেই জঙ্গি আখড়ার শিরোনামে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি। বহিষ্কৃতরা ছিল ইলেকট্রনিক অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইটিই আর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা ইইই’র ছাত্র।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ৭ জুলাই ঈদের দিন হামলা চালাতে গিয়ে নিহত জঙ্গিও নর্থ সাউথের ছাত্র। বাকি দশ জঙ্গির মধ্যে দু’জন এখানকার। শীর্ষ প্রশিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য পাবলিক হেলথের ডিন গিয়াসউদ্দিন আহসান আপাতত পুলিশ হেফাজতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। লাইব্রেরিতে ‘হিজব-উত-তাহরির’এর প্রচুর বই উদ্ধারের পর লাইব্রেরিয়ান মোস্তফিজুর রহমান সাময়িকভাবে বরখাস্ত রয়েছে।
এসব ঘটনার পর এ ইউনিভার্সিটির অভিভাবকরা এখন তাদের সন্তানদের নিয়ে জঙ্গি চিন্তায় দিন কাটছে। গতকাল মঙ্গলবার কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের ছাত্র রাইহানুল বাসারের বাবা ইউনিভার্সিটি ছেলের খোঁজখবর নিতে যায়। বাসারের বাবা এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশের এ ঘটনার কারণে ভীষণ চিন্তায় দিন কাটছি। সব সময় ছেলেকে নিয়ে ভাবতে হয়। ছেলের সার্বিক খোঁজ নেওয়ার জন্য ইউনিভার্সিটিতে এসেছি।
এবিষয়ে মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে। এবার পহেলা বৈশাখ নিয়ে শুনতে হয়েছে যে, এটা নাকি হিন্দুদের অনুষ্ঠান, ধর্ম বিরোধী। যে কারণে এবার বৈশাখে সন্ধ্যার আগেই সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। আর ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে কেউ যেন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেজন্য সচেতন হওয়া দরকার। নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা ২২ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত
