কূটনীতিকপাড়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফাঁক ফোকর খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : কূটনীতিকপাড়া ও এর আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা নিñিদ্র করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ওই নিরাপত্তা ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে এটা এখনো মনে করছে না এই বিষয়ে গোয়েন্দারা। গুলশান, বারিধারা, বনানী ও বসুন্ধরা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে গোয়েন্দাদের মনে হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আরও ব্যবস্থা নিতে হবে। একবার ব্যবস্থা নিয়ে বসে থাকলে হবে না। সময় সময় গৃহীত ব্যবস্থা আপডেট করতে হবে। নিয়মিত পর্যালোচনা করেও ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই এলাকার নিরাপত্তার জন্য আরও কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ওই ব্যাপারেও সুপারিশ করেছে। সেই হিসাবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও জানানো হয়েছে। সরকার প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকপাড়া ও এর আশপাশের সব এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
সূত্র জানায়, গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় কূটনীতিকদের চলাচল যেসব রোডে বেশি ওই সব রোডে আরও বেশি নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কোনো এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার বাইরে রাখা যাবে না। এখনো যেসব এলাকা ক্যামেরার আওতায় আসেনি তা আরও দ্রুত করতে হবে। বিদেশিরা যারা খাওয়ার জন্য যেসব হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, ক্লাবে যান ওইসব এলাকা ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ওইসব ক্লাবে ও সেখানে যারা কাজ করে ওই সব মালিকদের কাছ থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যাপারেও যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এরমধ্যে কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ দেওয়া হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। গুলশানে হলি আর্টিজান ঘটনায় হোটেলের সেফ অভিযানের সময়ে নিহত হয়েছে। তাকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর অন্যান্য হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ক্লাবসহ যেখানে বিদেশিরা যান সেখানকার স্টাফদের তালিকা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
সূত্র আরও জানায়, গুলশান এলাকার নিরাপত্তা এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। কারণ এখনো চেকপোস্টে অনেককেই চেক করা হচ্ছে না। নির্বিঘেœ মানুষ চলে যাচ্ছে। কেবল যাদের সন্দেহজনক মনে হচ্ছে তাদের চেক করা হচ্ছে। গোয়েন্দারা মনে করছে যারা চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের আরও সতর্ক হতে হবে। সেই সঙ্গে সন্দেহজনক ব্যক্তির বাইরেও ভিআইপি, কূটনীতিকসহ কয়েকটি ক্যাটাগরি ছাড়া কোনো কোনো সময় সবাইকে র্যান্ডম চেকিং করতে হবে। যাতে করে কেউ বাদ না যায়। এটা করা হলে ওই এলাকায় এক ধরনের ভীতির তৈরি হবে অপরাধীদের। তাই তারা ধরা পড়ার ভয়ে ওইসব এলাকায় যাবে না।
ইতালি ও জাপানির নাগরিকরা দুই দফায় হামলার শিকার হয়েছে। এই কারণে ওই দুই দেশের যারা বাংলাদেশে কর্মরত আছে তাদের নিরাপত্তা এখন যা আছে তার চেয়ে আরও বাড়াতে হবে। বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশেষ করে জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু। জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপানের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে জাপানকে বাংলাদেশের প্রতি যে সহযোগিতার হাত রয়েছে তা সংকুচিত করার জন্য কোনো কোনো মহলের চেষ্টা থাকতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য জাপানকে বাংলাদেশের পাশ থেকে সরিয়ে নেওয়া ও বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রাকে ব্যাহত করা। এই কারণে তাদের দেশের নাগরিকদের টার্গেট করে হত্যা করা হতে পারে। সেই বিবেচনায় তাদের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা কূটনীতিকপাড়া ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বিবেচনা করা সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। গুলশানের ঘটনার পর আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছি। সময় ও প্রয়োজন বিবেচনা করে আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এছাড়াও সাম্প্রতিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং কূটনীতিকদের তরফ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাওয়া হয়েছে তা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম