দিল ধারাকনে দো
যায়নুদ্দিন সানী
কলামটির শিরোনামটা কেমন লাগল? ‘জোস’? ‘হেভি’? নাকি হিন্দিতে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন? ‘লা জাওয়াব’। আসলে কোনোটাই না। নাক শিটকেছেন। এই তো? শিটকান। হু কেয়ারস। কথায় কথায় ইংরেজি ঝাড়া অনেক আগেই হজম করে ফেলেছি। যুক্তি ছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ’। এখন ‘হিন্দি’র পালা। যুক্তি? ‘আকাশ সংস্কৃতি’। বাহান্ন নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করতে চাইলে করেন, তবে অ্যাট দ্যা এন্ড অফ দ্যা ডে, ইহাই সত্য। হিন্দি আমরা শিখে গেছি। সো, গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে, জোয়া আখতারের একটি সিনেমার নাম কপি করে, আজকের শিরোনাম দিলাম। এনি প্রবলেম?
এনাফ অফ ‘হিন্দিতে ইন্টারভিউ’। ফেসবুক আর ব্লগ ঘাঁটলে দেখবেন, এটা ছাড়াও বাজারে এখনও আরও দু’তিনটা খবর বেশি চলছে। তার মধ্যে রামপাল আর জঙ্গিই টপে আছে। হোলি আর্টিজান অবশ্য নেই, আছে কল্যাণপুর। ইনফ্যাক্ট এটাই ফর্মূলা। লেটেস্ট ঘটনা নিয়েই হাউকাউ করতে হয়। খুব ভালো রেপসহ মার্ডার রিসেন্টলি যেহেতু ঘটেনি, সো, কল্যাণপুরই আপাতত লেটেস্ট। সঙ্গে চাইলে ‘ব্যাচেলর’ সমস্যা নিয়ে কিছু হিউমার করতে পারেন। তবে মোদ্দা কথা হচ্ছে, জঙ্গি প্রশ্নে যেহেতু তেমন কোনো বিরোধ নেই, তাই এখানে বাম আর লীগ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চিল্লাচ্ছেন। কোনো ট্রলিং নেই, কোনো গালিগালাজ নেই, এখানে উনারা ভাই ভাই। জাকির নায়েক ‘যাই যাই’ করেও এখনও ঝুলছে। ‘জেএমবির সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হতো’ এখনও খবর। ওদিকে চলছে জঙ্গিবিরোধী মানববন্ধন। সেলফি আর ফেসবুক আপলোড। চলছে ট্যাগিং, চলছে শেয়ার… ‘এই দেখ, জঙ্গি প্রশ্নে আমি কত সিরিয়াস’।
মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে এখন কোনো কথা নেই। টপিক এখন ‘এনএসইউ’। নতুন সেমিস্টারে ছাত্র পেতে কতটা সমস্যা হয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। মাঝে মাঝে কেউ কেউ মিতু কিংবা তনু নিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, কাজে দিচ্ছে না। কিছু উজবুক আবার দেখি সাগর-রুনিকে টানবার চেষ্টা করছে, তাই পারে? বরং সাজনিন হত্যা মামলার রায় নিয়ে লিখলে কাজে দেবে, ওটা রিসেন্ট। কিছু স্মৃতি রোমন্থন সেরে ফেলতে পারেন, বিচারব্যবস্থা নিয়ে টিপ্পনী কাটতে পারেন, এই চান্সে র্যাবের পক্ষেও দু’চার কলি গাইতে পারেন। তবে সাগর-রুনি ভুলেও না। হোলি আর্টিজানই এখন আর ইস্যু না, তো সেই কবেকার সাগর-রুনি।
কিছু কিছু আবার দেখলাম, বন্যা নিয়ে লেখার চেষ্টা করছে। ঠিক লেখা না, কোনো পত্রিকা থেকে বন্যায় আক্রান্ত এলাকার কিছু ছবি, আর সঙ্গে কিছু ‘আহা উহু’ টাইপ বিলাপ। কেউ আবার ‘সাহায্য করুন’ টাইপ আবদার। ইনু সাহেবের ‘চোর’ স্বীকারোক্তির কিছু প্রামাণ্য দলিলও দেখলাম। তবে সবই উলু বনে মুক্তা। আরে বেকুব, ফেসবুকে এসব গরিবী দুঃখ নিয়ে কথা শোনার জন্য কেউ বসে নেই। ওই লেখা কেউ পড়বেও না, লাইকও দিবে না। শেয়ারের তো প্রশ্নই আসে না। লিখতে ইচ্ছে করছে? পাবলিক যেন পড়ে, এমন টপিক নিয়েই লিখতে ইচ্ছে করছে? সো, ব্যাক টু দ্যা বেসিক। নতুনত্ব।
এনিওয়ে, আমিও বেসিকে ফিরে আসি। লিখব, সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ঘাঁটতে বসলাম পত্রিকা আর ফেসবুক। যা পেলাম তা তা নিম্নরূপ। গত কদিন ফেসবুকে চলছিল রামপাল সন্ত্রাস। সঙ্গে ইনুকে ভ্যাঙানো, ইউল্যাবের ছাত্রীদ্বয়ের পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য। হিন্দি চ্যানেলের উৎপাত নিয়ে দু’কথা। হিলারি আর ট্রাম্প তো আছেই, আছে ট্রাম্প পতœীর নগ্ন ছবি। জঙ্গিদের পরিচিতি, মৃত্যু দৃশ্য আর এর অ্যানালাইসিস। তবে, বন্যা একেবারেই নেই। মিথ্যা বলা হয়ে গেল? আচ্ছা, স্যরি, ‘প্রায় একেবারেই নেই’। এবার ঠিক আছে?
ফেসবুকে যেমনটা হয়, প্রথমে চলে তাত্ত্বিক আলোচনা এরপরে এক সময় হয়ে যায় দলাদলি। যদিও বলছি দলাদলি আসলে এটা ঠিক দলাদলি না। মূল সমস্যা হচ্ছে, কোন ব্যাপারে একজন ফেসবুকার কি মতামত দিবেন বা কি মতামত গ্রহণ করা উচিৎ, তা তিনি নিজেই জানেন না। জানেন একমাত্র তার নেতা অথবা নেত্রী। তিনি মুখ খেললেই তবে ফেসবুকাররা পক্ষ নেন। তার আগে পর্যন্ত চলে দু’দিক সামলানো কথাবার্তা। ‘আমাদের উন্নতি করতে বিদ্যুৎ চাই’ আবার ‘সুন্দরবনও চাই’।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন