
বিদেশিদের আশঙ্কা, আরও হামলা হতে পারে : ইইউ রাষ্ট্রদূত
জাহিদ হাসান : বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু বলছেন, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ঢাকায় তাদের যেসব বিদেশি কর্মকর্তা কাজ করছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের তারা দেশে পাঠানোর কথা বিবেচনা করছেন। তাদের অনেকেই চলে গেছেন, বাকি অনেকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
বুধবার বিবিসি বাংলার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, গুলশান হামলায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ এখনো কাটেনি। তিনি আশঙ্কা করছেন গুলশান হামলার মতো ঘটনা বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে।
গুলশান হামলার পর বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ যে একেবারেই কাটেনি সেটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুর কথায় পরিষ্কার। তিনি বলেন, গত বছর ইতালীয় নাগরিক সিজারে তাবেলা ও জাপানের নাগরিক কোনিও হোসিও হত্যার মধ্য দিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল সেটি গুলশান হামলার পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাস কর্মীরা এখন প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন না। এমন অবস্থায় ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে যেসব বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মি. মায়াদু।
তার দূতাবাসে বিদেশি কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশে পাঠানো হবে কিনা বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে মি. মায়াদু বলেন, এটা আমাদের বিবেচনার মধ্যে আছে। আমাদের সদর দফতর থেকে এরই মধ্যে একজন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ঢাকায় এসেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ হবে। আমরা নির্ণয় করার চেষ্টা করব কীভাবে আমাদের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। আমাদের কিছু সহকর্মী এরই মধ্যে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাকিরা এখনো অপেক্ষা করছে কী সিদ্ধান্ত আছে সেটি দেখার জন্য। আমি জানি অনেক বিদেশি মিশন তাদের পরিবারের কর্মীদের সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে বলেছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি, আগস্টের মাঝামাঝি ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল স্কুলগুলো খুলতে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
বাংলাদেশের সরকার বরাবরই বলছে যে, নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইইউর রাষ্ট্রদূত মি. পিয়েরে মায়াদু বলছেন, যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু উদ্বেগ এখনো কাটছে না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন হামলা হচ্ছে তখন ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে তারা কী বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে? এমন প্রশ্নে মি. মায়াদু বলেন, বিষয়টি মোটেও সে রকম নয়। অবশ্যই আমরা বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি না। জুলাই মাসের এক তারিখে ১৭ জন বিদেশিকে চোখের সামনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এরপরে কেউ যদি বলে নিরাপত্তা নিয়ে আমরা অতিরিক্ত দেখাচ্ছি তাহলে সেটি নিহত ও তাদের পরিবারকে অপমান করার মতো। পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক, আমার ধারণা এখানে সব স্টেক হোল্ডারদের একই ধারণা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কার। একই ধরনের ঘটনা ভিন্নভাবে আবারও ঘটতে পারে। সুতরাং এটি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়।
ইইউর রাষ্ট্রদূত বলছেন, গুলশান হামলার পর তাদের দিক থেকে সরকারের কাছে নিরাপত্তার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তারা কী ধরনের নিরাপত্তা চান সেটিও সরকারের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে। এখন ঢাকার তথাকথিত কূটনৈতিক এলাকা অনেক সুরক্ষিতও বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে নিরাপত্তা যে শুধু কূটনৈতিকপাড়ায় নয় সেটিও মনে করিয়ে দেন মি. মায়াদু।
তিনি বলেন, আমি বলব যে অতিদ্রুত অনেক কিছুই করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো বলতে পারি না যে নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি আস্থা ফিরে এসেছে। আমরা শুধু কূটনৈতিকপাড়ার কথা বলছি না, আমরা পুরো বাংলাদেশের নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা প্রতিটি বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ গত দেড় বছরে সন্ত্রাসী হামলায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত ৫০ জন নিহত হয়েছে। এটা শুধু গুলশান বা বারিধারার নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয় নয়।
ইইউর রাষ্ট্রদূত বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে এবং ঘটনার ভয়াবহতাও স্বীকার করতে হবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে অনেক কিছু করা হয়েছে। মায়াদু উল্লেখ করেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়নি। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
