চিকিৎসকদের ৭০০ দল বন্যাদুর্গত অঞ্চলে বন্যায় বাড়ছে রোগ-বালাই
রিকু আমির : বন্যাদুর্গত অঞ্চলে চিকিৎসকদের ৭০০টি দল একযোগে কাজ করছে। তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার জানায়, বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে রোগের প্রাদুর্ভাব। ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালীর প্রদাহসহ নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বানভাসীরা।
গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এবং দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এতে সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে উপদ্রুত এলাকায় বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে খাবার স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বন্যা উপদ্রুত এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের চিকিৎসকদেরকে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকতে হবে। বন্যার্তদের মাঝে দ্রুততার সাথে যেন পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম পৌঁছে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পথ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বানের পানিতে ডুবে নয় দিনে শিশুসহ ৫৫ জন ও সাপে কাটায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে তিন হাজার মানুষ। সেন্টারের নিয়ন্ত্রণকক্ষে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পানি কমছে, সঙ্গে বাড়ছে রোগের প্রভাব। পানি কমলে দুর্গত এলাকায় দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালীতে প্রদাহসহ পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ সময় বিশুদ্ধ পানি পান, খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার খুব দরকার বলে জানান তিনি।
এ কর্মকর্তা জানান, গত ২৫ জুলাই থেকে বিভিন্ন রোগে ৩ হাজার ৩২৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন; যাদের মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। এ সময় ২৮১ জন ডায়রিয়া, ৯৪ জন আরটিআই, ৮১ জন চর্মরোগ, ৪৮ জন চোখের প্রদাহ, ২৬ জন বিভিন্ন আঘাত এবং ১০৮ জন অন্যান্য রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। পানিতে ডুবে ও সাপে কাটায় লোকজন মারা গেলেও রোগে আক্রান্ত হয়ে এখনও কারও মৃত্যু হয়নি জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন জানান, গত নয় দিনে যারা মারা গেছে, তাদের অধিকাংশই শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় পানিতে ডুবেই ১০ জন মারা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বন্যাদুর্গত ১৪ জেলার সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে প্রতিদিন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিশেষ তথ্যকণিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। উপদ্রুত অঞ্চলের রোগ ও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
সভায় অন্যান্যের মাঝে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেনসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।