বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইমানের দাবি
দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে পানিবন্দী অসহায় জীবন যাপন করছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া ইমানের দাবি। আর্তমানবতার সেবায় নিজকে বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দার তালিকাভুক্ত হওয়ার এটিই পরম সুযোগ। বন্যাকবলিতদের প্রতি করণীয় সম্পর্কে জানাচ্ছেন দেশ বরেণ্য আলেমরা। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন
ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ
উপ পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
বন্যা উপদ্রুত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষ অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় ও চিকিৎসার অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন যাপন করছে। বানভাসি মানুষের কাছে এখন একেকটি দিন যেন দুর্বিষহ কষ্টের অনন্তকাল। বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইমানের দাবিও বটে। তাই আমাদের উচিত আর্তমানবতার সেবায় স্বেচ্ছায় যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বন্যার্তদের পাশ দাঁড়ানো। রাসুল সা. বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই! আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারি মুসলিম।) তিনি সা. আরো বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয় করো। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ মুসতাদরাক
আ.খ.ম. আবু বকর সিদ্দিক
অধ্যক্ষ, দারুন নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা।
কোনো মুসলমানই বিপদগ্রস্ত কোন মানুষকে দেখে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন না। বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া অশেষক নেকীর কাজ। ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত মানুষকে অন্ন ও বস্ত্রদানের প্রতিদান সম্পর্কে রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, কেয়মাতের দিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে কেয়ামতের দিন পানি পান করানো হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে কেয়ামতের দিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’ আবু দাউদ। আল্লাহ সবাইকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দিন।
ড. মাওলানা একেএম মাহবুবুর রহমান
অধ্যক্ষ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসা, চাঁদপুর।
বন্যায় অনেক পরিবারের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ ও জীবন-জীবিকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বসতভিটা, জমি-জিরাত ও ফল-ফসল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় অসহায় বানভাসি মানুষ কতটা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়েছে, তা সহজেই বুঝা যায়। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবনযাপনরত বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োাজনীয় ত্রাণ তৎপরতা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। যেমনিভাবে রাসুল সা. দিকনির্দেশনা প্রদান করে বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করো এবং বন্দীকে মুক্ত করো অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করো।’ বুখারি
শাইখ মাওলানা জামাল উদ্দিন
চেয়্যারমান, জামালী তা’লিমুল কোরআন সোসাইটি
আমাদের চারপাশে যে অসহায় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এর প্রতিকার এবং প্রতিরোধের জন্য তাদের সাহায্য করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্য কর্তব্য। রাসুল সা. বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্যে করবে, আল্লাহ ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ (মুসলিম।)
তিনি সা. আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানব সেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়া দান করেন। তারা তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। তার প্রত্যেক কদমে একটি গোনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আত তারগীব
মুফতি কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী
অধ্যক্ষ, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদরাসা
যে ধার্মিক শুধু প্রথাগত ইবাদত করেন, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় বিপদগ্রস্ত ও দুস্থ মানবতার কল্যাণের জন্য দান-খয়রাত, জাকাত-সাদকা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহায্য-সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন না; সমাজের অসহায় বিপন্ন, বন্যাদুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্ত নিঃস্ব অর্ধাহারী-অনাহারী গরিব মানুষের অভাব দূর, ক্ষুধা নিবারণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে দানশীলতা ও বদান্যতার চর্চা করেন না; ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে অংশ নেয় না; তিনি কখনোই আল্লাহ ও রাসুলের প্রিয়ভাজন হতে পারেন না। রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না। বুখারি ও মুসলিম
ধনীদের থেকে গরীবরা এমনিতেই সাহায্য পাওয়ার দাবিদার। আর দুর্যোগের সময়তো তা হয়ে দাঁড়ায় আবশ্যকীয়।