কৃতজ্ঞতার প্রতিদান
মুফতি মুহাম্মদ আবু সালেহ
মানুষ স্বপ্নকামী জীব। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে। তাই স্বপ্ন দেখে। শান্তি-সুখের। উন্নয়ন-অগ্রগতির। ধর্মের বিবেচনায় যারা বিধর্মী, যারা পরকালকে বিশ্বাস কওে না; আখেরাত বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে বলে স্বীকার করেনা, যারা মনে করে; দুনিয়ায় তাদের শুরু, দুনিয়ায় তাদের শেষ; যাদের মন মগজে গেঁথে আছে, খাও দাও ফূর্তি কর; দুনিয়াটা মস্ত বর এই নীতি। তাদের স্বপ্নের পরিধি সীমিত। তারা বিশ্বাস করে, চোখের সামনে ভেসে থাকা জিনিসগুলো। আর এগুলোর স্বপ্নেই বিভোর থাকে সবসময়।
পক্ষান্তরে মুমিনের অবস্থা এর বিপরীত। তার বিশ্বাষের গন্ডি যেমন বিস্তৃত, তেমনি তার স্বপ্নের আয়তনও বিশালাকার। তাই মুমিনের স্বপ্ন দুনিয়ার সীমানা পেরিয়ে আখেরাতকে আচ্ছন্ন করে। ফলে সে শুধু বিশ্বের নামি দামি কোন জাগায় কোন রাজপ্রাসাদের স্বপ্ন দেখে না, বরং স্বপ্ন দেখে জান্নাতুল ফেরদাউসের। আরশের ছায়া আর হাউজে কাউসারের পানির। স্বপ্ন দেখে, আল্লাহর দিদার লাভের মত উচ্ছ বিষয়ের। পরকালের রঙ্গিন এ স্বপ্ন মুমিনের জীবনচাঁকাকে সবমসময় রাখে সচল। এরপরও মুমিন মাঝে মাঝে থেমে যায়। হয় হতাশার শিকার। বিভিন্ন বিপদাপদ আর মসিবত এর অন্যতম কারণ।
বিপদ-আপদ, মানবজীবনের আসে। একটি অনস্বীকার্য বিষয়। সবার জীবনেই বিপদ বিভিন্ন আঙ্গিকে। বিভিন্ন রুপে। সৃষ্টিগত দূর্বলতার কারণেই মানুষ তখন থমকে দাড়ায়। হতাশ হয়ে আবোল তাবোল বকে। নিজের ভাগ্যকে দায়ী করে। কেউ কেউ উপরওয়ালাকেও যা তা বলতে থাকে।
বিপদের এ স্পর্শকাতর সময়টিও মুমিনের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। মুমিন চায়লে, সুযোগের সদ্বব্যবহার করে হাতিয়ে নিতে পারে আকর্ষণীয় প্রতিদান। বান্দার জন্য আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে, তুমি যে অবস্থায় থাকোনা কেন; আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় কর। এ কৃতজ্ঞতা তোমার জন্য কল্যাণকর ফল নিয়ে আসবে। ফল সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা আদায় কর; তাহলে অবশ্যই আমি আমার নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। সুরা ইবরাহিম: ৭
কুরআনের অন্য এক স্থানে মুমিনের গুণ বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের উপর কোন বিপদ আসে; তখন তারা বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সকলেই তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।’ সুরা বাকারা:১৫৬
মানুষ বলে থাকে, পৃথিবীতে সবচে কষ্টসাধ্য বিষয় হচ্ছে, পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। বিষয়টির সত্যতাও হয়তো তাই। এজন্যই কঠিন এ বিপদে যে ব্যক্তি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা এবং ইন্না লিল্লাহ বলবে, আল্লাহ তার জন্য একটি বিশেষ প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন। হযরত আবু মুসা আশআরি রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, যখন কারো সন্তান মারা যায়; তখন আল্লাহ তায়ালা জান কবজকারী ফেরেশতাদেরকে বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছো? ফেরেশতারা বলেন, হা করেছি। আল্লাহ পূণরায় বলেন, তার কলিজার ধন কে তোমরা নিয়ে এসেছো? উত্তরে তারা হ্যাঁ বলেন। আল্লাহ তখন বলেন, এর প্রতিক্রিয়ায় আমার বান্দা কী বলেছে? ফেরেশতারা বলেন, সে আপনার কৃতজ্ঞতা আদায় করেছে এবং ইন্না লিল্লাহ পড়েছে। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমার এ বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর। যে ঘরের নাম রাখা হয় বায়তুল হামদ বলে। তিরমিজি শরিফ:১০২১
তাই আসুন! আমরা সজাগ থাকি, যে কোন কঠিন বিপদে যেন আমাদের অবহেলার কারণে মূল্যবান প্রতিদান হাতছাড়া হয়ে না যায়। নিজের হুশ জ্ঞান ঠিক রাখি। আর সর্বাবস্থায় বলি আলহামদু লিল্লাহ।