
ভারত-পাকিস্তানের কাদা ছোড়াছুড়িতে শেষ হলো সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক
লিহান লিমা ও মমিনুল ইসলাম : চির বৈরি দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়েই শেষ হলো দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার সার্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। গত বুধবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে শুরু হওয়া সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠক শেষ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। বৈঠকে আঞ্চলিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসহ সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি, মাদক, জলদস্যু সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে গণমাধ্যমে আলোড়ন তোলে ভারত-পাকিস্তানের কাদা ছোড়াছুড়ি। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, এনডিটিভি, ডন।
বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সার্কের সব দেশের পাশে থাকবে পাকিস্তান। সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখবে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নাসির আলী খান বলেন, এই সময়ে আমাদের পর্যাপ্ত সুযোগ গ্রহণ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিবেশ শান্ত করতে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক উন্নত করতে যা যা করার সবই করা হবে। সার্ক সম্মেলনকে সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
ভারত সরকারের নাম না নিয়ে নিসার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আন্দোলন দমনে অত্যধিক শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানান। বলেন, নির্দোষ শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। উগ্রবাদী মনোভাব ত্যাগ করে সংলাপের মাধ্যমে আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের কথা বলেন নিসার।
তার এ বক্তব্যের পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, ‘কেবলমাত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নয়, যেসব রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদে মদত দেয় তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রাজনাথ আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই। সন্ত্রাসবাদের কোনো ভালো বা মন্দ নেই। সন্ত্রাসবাদ তো সন্ত্রাসবাদই। সন্ত্রাসীদের কোনো মতেই ‘শহীদ’ বলে গুণগান গাওয়া উচিত নয়।’ ৮ জুলাই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয় হিজবুল মুজাহিদিন নেতা বুরহান ওয়ানি। তাকে পাকিস্তানের দেওয়া খেতাব প্রসঙ্গে এ কথা বলেন রাজনাথ।
এদিকে এনডিটিভি জানিয়েছে, সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দেওয়া বক্তব্য প্রচার করেনি পাকিস্তানি মিডিয়া। সার্কের শীর্ষ এ সম্মেলন সম্প্রচারে একমাত্র অনুমতিপ্রাপ্ত মিডিয়া ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভি। টিভিটি রাজনাথের এ বক্তব্য প্রচার করেনি বলে অভিযোগ ভারতের।
এছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যম দলকে রাজনাথের ভাষণ ধারণ ও সম্প্রচার করতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভারতের গণমাধ্যম এবং পাকিস্তানের বেসরকারি চ্যানেলগুলোকেও বৈঠক কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এনিয়ে দুদেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বাকবিত-াও হয় বলে জানা যায়।
সম্মেলনের আগে পাক-ভারতের দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথমবারের এ সাক্ষাতে ভালোভাবে হাত মেলাতে দেখা যায়নি। এমনকি বৈঠক শেষে নিসার আলী খানের মধ্যাহ্নভোজেও যোগ দেননি রাজনাথ।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া আট জাতির সার্ক দেশগুলোর সব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দেন। বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র সচিব। সম্পাদনা : রাশিদ রিয়াজ
