
পাকিস্তানে দাঁড়িয়েই কড়া আক্রমণ, রাজনাথের ভাষণ দেখালো না পাকিস্তান টিভি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের নজিরবিহীন অসৌজন্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়াল সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে। রাজনাথ সিংহের ভাষণের টিভি সম্প্রচার আটকে দিল পাকিস্তানের সরকার। কাজ করতে দেওয়া হল না ভারতীয় মিডিয়াকে। তা নিয়ে প্রকাশ্যে বাগ্যুদ্ধে জড়ালেন দু’দেশের আধিকারীকরা। ইসলামাবাদে দাঁড়িয়েই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ চালালেন রাজনাথ। পাকিস্তানের অসৌজন্য আচরণে অসন্তুষ্ট ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যাহ্নভোজ না করেই ইসলামাবাদ ছাড়লেন। আনন্দবাজার
কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত-পাক বাগ্যুদ্ধ বা উত্তেজনা এই প্রথম নয়। সার্ক সম্মেলনেও এই দুই বিবদমান প্রতিবেশীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা দেখা গিয়েছে একাধিকবার। কিন্তু ইসলামাবাদে আয়োজিত এবারের সম্মেলন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সব নজির ভেঙে দিয়েছে। সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এ দিন রাজনাথ সিংহ প্রত্যাশিতভাবেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ‘শুধু সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই যথেষ্ট নয়, যে সব দেশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ রাজনাথের এই মন্তব্যের লক্ষ্য যে প্রধানত: পাকিস্তানই, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। ভারতে প্রায় সমস্ত জঙ্গি নাশকতার সঙ্গেই যে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে, তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। মুম্বাই জঙ্গি হামলার মূল চক্রী হাফিজ সইদকে জাতিসংঘ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও পাকিস্তানে এখনও তিনি বিনা বাধায় নিজের কার্যকলাপ চালিয়ে যান। কাশ্মীরে সন্ত্রাসের অন্যতম প্রধান কারিগর জৈশ প্রধান মাসুদ আজহার এবং হিজুবল প্রধান সালাউদ্দিনও পাকিস্তানের আশ্রয়ে থেকেই ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাঠানকোটে জঙ্গি হামলার পর থেকেই এঁদের গ্রেফতারি চেয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ আরও বাড়িয়েছে ভারত। ইসলামাবাদ সে কথায় কান তো দেয়ইনি। উল্টে কাশ্মীরে সাম্প্রতিক অশান্তি বাড়িয়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীও উস্কানিমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় রাজনাথ যে সার্ক সম্মেলনে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন, তা অস্বাভাবিক নয়। সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে যে সব রাষ্ট্র, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের বার্তা দেওয়ার সঙ্গে রাজনাথ বৃহস্পতিবার আরও বলেন, ‘জঙ্গিদের শহিদ আখ্যা দিয়ে মহিমান্বিত করা বন্ধ করতে হবে।’ ৮ জুলাই কাশ্মীরে সেনা অভিযানে নিহত হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে শহিদ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানে বিভিন্ন কট্টরবাদী সংগঠন শোরগোল শুরু করেছে। তার বিরোধিতা করতেই রাজনাথ এই মন্তব্য করেন। সন্ত্রাস প্রসঙ্গে রাজনাথ সিংহের অবস্থান যে কড়া হবে, তা পাকিস্তানের সরকারও জানত। তাই চরম অসৌজন্য দেখিয়ে পাকিস্তান টেলিভিশন রাজনাথ সিংহের ভাষণের সময় সার্ক সম্মেলন কক্ষের লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তানের অন্যকোনো টেলিভিশন চ্যানেল সম্মেলন কক্ষে ছিল না। শুধু সরকারি চ্যানেলকেই সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পিটিভি রাজনাথের ভাষণ না দেখানোয়, পাকিস্তানের কোথাও রাজনাথ সিংহের ভাষণ দেখা বা শোনা যায়নি। ভারতের নিজস্ব টেলিভিশন টিম সম্মেলন স্থলে ছিল। কিন্তু এদিন তাদেরও সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি সম্মেলন স্থলে ঢোকার মুখে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যখন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের সঙ্গে করমর্দন করেন, তখনও ভারতীয় মিডিয়াকে দূরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। ভারতীয় আধিকারিকরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তাতে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের তীব্র বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু ভারতীয় টিভি সম্প্রচার দলকে কিছুতেই রাজনাথের ভাষণের রেকর্ডিং-এর জন্য সার্ক সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে দেয়নি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ।
এমন নজিরবিহীন ঘটনায় অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন রাজনাথ সিংহ। ইসলামাবাদ যে ন্যূনতম কূটনৈতিক সৌজন্যও ভুলে গিয়েছে, তা নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়। ফলে সম্মেলন শেষে পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে রাজনাথ সিংহ অংশ নেননি। তিনি না খেয়েই সম্মেলন স্থল ছাড়েন।
রাজনাথ সিংহের ইসলামাবাদ সফরের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিভিন্ন কট্টরবাদী এবং জিহাদি সংগঠন বেশ কয়েক দিন ধরেই সরব ছিল। হাফিজ সইদ, সৈয়দ সালাউদ্দিনদের নেতৃত্বে বুধবারও পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছিল। তাই রাজনাথ সিংহকে ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, সার্ক সম্মেলন উপলক্ষে রাজনাথ যখন পাকিস্তানে যাবেন, তখন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পাকিস্তানেরই। তাই মান বাঁচাতে পাকিস্তান সরকার রাজনাথকে হেলিকপ্টারে করে হোটেলে পৌঁছে দেয়। কিন্তু সম্মেলন স্থলে পাকিস্তান রাজনাথ সিংহ সহ গোটা ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে যে হেনস্থার মুখে ফেলেছে, তার তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে। বৈঠক শেষে বিভিন্ন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ
