কষ্টার্জিত অর্থ অপব্যবহার করা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী
দীপক চৌধুরী : দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করা গুরুদায়িত্ব বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতা কোনো ভোগের বস্তু নয়, জাতির প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের। সরকারি অর্থ অপচয় না করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশও দেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও কাছে ক্ষমতা হচ্ছে ভোগের বস্তু, আর কারও কাছে ক্ষমতা হচ্ছে কর্তব্য পালন করা। আমাদের চিন্তা হচ্ছে জাতির প্রতি কর্তব্য পালন। দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করা। মানুষ যে আমাকে একটা ভোট দিল, তার বদলে সে কী পেলÑ এটাই তখন বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে আগামী দিনের স্বপ্ন দেখতে হবে যে তার জীবনটাও উন্নত হবে, হাহাকার থাকবে না, জীবনমান উন্নত হবে। সব সময় তাদের ভেতরে একটা চেতনা জাগরূক রাখতে হবে, তবেই উন্নয়নের কাজটা ত্বরান্বিত হবে। মানুষকে সুন্দর ভ?বিষ্যতের জন্য স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জীবনমান উন্নয়নের যে চেতনা, তা জনগণের মধ্যে জাগিয়ে রাখতে পারলেই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প প্রণয়নটা শুধু অর্থ ব্যয়ের চিন্তা থেকেই যেন না হয়। সেখান থেকে কতটুকু দেশের উন্নতি হবে আর এর সুফল মানুষ কতটুকু পাবে সে হিসাবটাই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সেই সাথে সাথে আমাদের এই কষ্টার্জিত অর্থ- এটার যেন অপব্যবহার না হয়। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের কথা উলেখ করে তিনি বলেন, সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। এতে আমাদের নিজেদেরও একটা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এ অর্থটা আমাদের, এটা যেন অপচয় না হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশকে উন্নত করতে চাই। সেই লক্ষ্যে নিয়েই কিন্তু আমাদের রাজনীতি। আমরা নানা ধরনের রাজনীতি অতীতে দেখেছি। কিন্তু যে দলটা একেবারে তৃণমূল থেকে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে গঠিত হয় এবং মানুষের জন্য কাজ করতে পারে, ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাদের মানুষের জন্য চিন্তা-ভাবনাটা অন্য রকম থাকে। হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসলে তাদের চিন্তা অন্য রকম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোটের অধিকারটাও কিন্তু আমাদের অর্জন করতে হয়েছেÑ অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে। সেটাও আমাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা সেই চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কাজ করছি বলেই আজকে যেমন মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি, মানুষের জীবনমান কিছুটা হলেও উন্নত করতে পেরেছি। আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছিলাম স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশকে উন্নীত করে আর ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানান, সব মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভাগ ছাড়াও এবার নতুন করে এ চুক্তির আওতায় এসেছে বিভাগীয়, আঞ্চলিক ও জেলার অফিসগুলো।
কর্মসম্পাদন চুক্তির মাধ্যমে দক্ষতা ও কাজের অগ্রগতির মূল্যায়ন ছাড়াও কর্মসম্পাদনে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।