
ভারতের রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেল জিএসটি বিল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পণ্য ও পরিসেবা কর ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল দশ বছর আগে। গত বছর সেই উদ্যোগের প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়। এবার দ্বিতীয় পর্ব পার হলো দেশের অর্থনীতি।
সাধারণ পণ্য ও পরিসেবা কর (জিএসটি) চালুর জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল গত বছর মে মাসে লোকসভায় পাস হয়েছিল। গতকাল সেটি পাস হলো রাজ্যসভায়। রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে একমাত্র এডিএমকে ওয়াক আউট করে। কংগ্রেস থেকে শুরু করে বাকি সব বিরোধী দল একজোট হয়েই জিএসটির পক্ষে ভোট দিয়েছে। সংবিধানের ১২২তম সংশোধনীর পক্ষে সায় দিয়েছেন রাজ্যসভায় উপস্থিত ২০৩ জন সাংসদই। আনন্দবাজার
জিএসটি চালু হলে সারা দেশে একই ধরনের কর কাঠামো বলবৎ হবে, যাকে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীসহ নানা মহল থেকেই বলা হচ্ছে, ‘এক দেশ, এক কর’, কিংবা ‘এক দেশ, এক বাজার’। প্রায় সকলেই একমত যে, পণ্য ও পরিসেবা চলাচলের পথ মসৃণ হওয়ার সুফল ভোগ করবে দেশের অর্থনীতি। একটি হিসেবে, এই ব্যবস্থার ফলে জিডিপি ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি বাড়বে। অন্যদিকে, বিভিন্ন করের হার পুনর্বিন্যাসের ফলে, বিশেষ করে পরিসেবার উপর করের হার বাড়ার ফলে প্রথম কয়েক বছর মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা আছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ সবই হবে জিএসটি কার্যকর হওয়ার পরে, যা এখনও অন্তত এক-দেড় বছর পরের ব্যাপার।
সব দল এক জোট হয়ে জিএসটির পক্ষে ভোট দেওয়াকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সব দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। রপ্তানি বাড়বে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প সফল হবে। বিল পাসের পরে সংসদে অর্থমন্ত্রীর ঘরে রীতিমতো কেক কেটে উৎসবও হয়!
তবে কংগ্রেস সরকারের সামনে দুটি কঠিন শর্ত রেখেছে। প্রথমত, জিএসটি চালু হলে করের হার কম হতে হবে। একই দাবি বাকি বিরোধী দলগুলোর। কংগ্রেসের তরফে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম যুক্তি দেন, মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টাই সুপারিশ করেছিলেন যে জিএসটি চালু হলে অধিকাংশ পণ্যে ১৮ শতাংশ হারে কর চাপবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে তার থেকে কম হারে কর চাপবে। কিন্তু অ্যালকোহল, ভোগ্যপণ্য, বিদেশ থেকে আমদানি করা গাড়ির মতো পণ্যে করের হার আরও বেশি হবে। তাই কংগ্রেস করের হার ১৮ শতাংশে বেঁধে রাখার দাবি তুলেছে। তাদের প্রশ্ন, এত বড় কর সংস্কার করেও যদি সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা না কমে, তা হলে কী লাভ! এ নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারে নামবেন বলেও জানিয়েছেন চিদাম্বরম। কিন্তু জেটলির যুক্তি, এখন ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ পণ্যের উপর প্রায় ২৭ শতাংশ হারে কর চাপে। তার সঙ্গে বিভিন্ন কর যোগ হয়ে তা প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছায়। জিএসটি ব্যবস্থায় করের উপর কর চাপবে না। কর আদায় ব্যবস্থা দক্ষ হবে। কর ফাঁকি দেওয়া কঠিন হবে। ফলে এমনিতেই করের বোঝা কমবে। কিন্তু জিএসটি বিলে করের হার ঠিক না করে তা কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে তৈরি জিএসটি পরিষদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা যে নীতি তৈরি করেছেন, তার প্রথম কথাই হলো, করের বোঝা কমাতে হবে। পাশাপাশি কেন্দ্র ও রাজ্যের রাজস্ব আয়ও এক থাকবে।
বিরোধীদের দ্বিতীয় দাবি, জিএসটি বিলকে অর্থ বিল হিসেবে সংসদে পেশ করা চলবে না। যার অর্থ হলো, লোকসভার পাশাপাশি রাজ্যসভাতেও বিলটি পাস করাতে হবে। লোকসভায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও রাজ্যসভায় নয়। কিন্তু ঘটনা হলো, কংগ্রেস যাতে এর পর আর বাধা দিতে না পারে, তার জন্য শীতকালীন অধিবেশনে জিএসটি বিলকে অর্থ বিল হিসেবে নিয়ে আসার ভাবনা রয়েছে সরকারের। ঠিক যেভাবে এর আগে অর্থ বিল হিসেবে পেশ করে আধার বিল পাস করিয়েছিল তারা। সেই কারণে এই প্রশ্নেও কোনো প্রতিশ্রুতি জেটলি দেননি। তিনি বলেছেন, যে বিল এখনো তৈরিই হয়নি, তা নিয়ে আগেভাগে আশ্বাস দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। তবে জিএসটি পরিষদে এ নিয়ে আলোচনা হবে।
রাজ্যসভায় সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের পর আবার তা লোকসভায় পাস করাতে হবে। (কারণ, রাজ্যসভায় বিলটির কিছু পরিমার্জন হয়েছে।) তারপর তা অন্তত ১৫টি রাজ্যের বিধানসভায় পাস হতে হবে। তবে এই বিল আইনে পরিণত হবে। তারপর তৈরি হবে জিএসটি পরিষদ। সেই পরিষদ করের হার নিয়ে আলোচনা শুরু করবে।
