গুলশান হামলা : অবশেষে সেই হাসানাত ও তাহমিদকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে
বিপ্লব বিশ্বাস : অবশেষে এক মাসের অস্পষ্টতার পর হাসনাত রেজাউল করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে গুলশান হামলার ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে আট দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনা থেকে ছাড় পাওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম এবং কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বুধবার রাতে গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। গুলশান আড়ংয়ের সামনের রাস্তা থেকে বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় হাসনাতকে এবং রাত পৌনে ৯টার দিকে তাহমিদকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করা হলে মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালত তাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা যায়, তাহমিদ হাসিব খান আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। তিনি কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কানাডার স্থায়ী নাগরিক। ১ জুলাই গুলশান হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ। হাসনাত করিমের বাবা মোহাম্মদ রেজাউল করিম। হাসনাত বাংলাদেশ ও বৃটেনের দ্বৈত নাগরিক। বৃটেনের নাগরিক হলেও সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসে বাবার আর্কিটেক্ট ফার্মে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ঘটনার দিন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি হলি আর্টিজানে পরিবার নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন।
১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ নাগরিক নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানের পর ওই রেস্টুরেন্ট থেকে ৩২ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত জিম্মিদের মধ্যে হাসনাত করিম ও তাহমিদের রহস্যজনক আচরণের কারণে তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর হাসনাত ও তাহমিদকে ছেড়ে দেওয়ার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তাদের অবস্থান জানা যায়নি।
হলি আর্টিজানে হামলার পর একজন কোরিয়ান নাগরিকের ক্যামেরায় গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর হাসনাত করিম ও তাহমিদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষকের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। হলি আর্টিজানের জিম্মি ঘটনায় তাকে জঙ্গিদের কয়েকজনের সঙ্গে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁটতে ও কথা বলতে দেখা গেছে। এর আগে ওই দুজনের অবস্থান সম্পর্কে গুলশান হামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের কাছে হাসনাত ও তাহমিদের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘হাসনাত করিম ও তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাগালের মধ্যেই আছেন। তাদের আমরা একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।’ তখন তিনি এও দাবি করেন, ‘হয়তো যে কোনও কারণে তারা বাসায় অবস্থান না করে অন্য জায়গায় অবস্থান করছেন। তারা কোথায় আছেন, এটা মোটামুটি আমাদের ধারণায় রয়েছে। আমাদের ওয়াচের মধ্যেই আছে, সার্ভিলেন্সের ভেতরেই রয়েছে। আমরা চাইলে তাদের পাবো।’
হাসনাত করিমের পরিবারের এক সদস্য গত মাসের মাঝামাঝিতে জানান, ‘জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত ২ জুলাই রাতে তার সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এরপর আর দেখা হয়নি। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাসনাত তাদের হেফাজতে নেই। তখন একই ধরনের কথা বলা হয় ফাহমিদের পরিবারের পক্ষ থেকেও।’
সম্পাদনা: এএইচসি