অজুহাতে স্কুল বন্ধ থাকলে ব্যবস্থা নেবে সরকার
দেলওয়ার হোসাইন : নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রাখার অভিযোগ পেলে স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় । শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রাখা যাবে না। কেউ যদি অনিরাপত্তা বোধ করেন তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে পারেন। আমি যতদূর জানি এ ধরনের সহযোগিতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করছে। তাহলে তাদের তো সমস্যা থাকার কথা নয়। কাউকে জিম্মি করে নিরাপত্তার কথা বলবেন সেটি মানা যাবে না। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছে। তারা ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তাদের সমস্যা না হলে শুধু ইংলিশ মিডিয়ামে সমস্যা হবে কেন?
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কয়েকটি স্কুলে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বেশির ভাগ স্কুলে ক্লাস চালু রয়েছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সানিডেল, স্কলাসটিকা, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড, মাস্টারমাইন্ডসহ কয়েকটি স্কুল শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। ম্যাপললিফ, অর্ক্সফোড, কার্ডিফসহ বেশিরভাগ স্কুলে স্বাভাবিক ক্লাস চলছে। চালু থাকা স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় জুন-জুলাই মাসে। এতে বছরের শুরুতে স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এছাড়া জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা অনেক বেশি জোরদার করা হয়েছে। স্কুল ছুটি হওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্কুল চলাকালীন সময়ে কাউকে ভিতরে যেতে দেওয়া হয় না। কোনো শিক্ষার্থী আইডি কার্ড ছাড়া স্কুলে প্রবেশ করতে পারে না। সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সানিডেল স্কুলের প্রিন্সিপাল তাজিন আহম্মেদ বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্লাস শুরু করব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সানিডেল স্কুলের একাধিক শিক্ষক বলেন, গত ২৬ জুলাই স্কুলে ক্লাস চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়েছে অনিবার্য কারণে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্লাস বন্ধ থাকবে।
ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরে আযম মিয়া বলেন, ধানমন্ডি এলাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। স্কুল চালু এবং ছুটির সময় টহল পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
স্কলাসটিকা স্কুলের উত্তরা শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল সাফকাত ইয়াসমীন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্লাস চালু করা হবে। এর আগে গেল মাসের ২১ তারিখ তিনি জানিয়েছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দুই দফা স্কুল খোলার তারিখ পিছানো হয়েছে। ১০দিন পর অর্থাৎ ৩১ জুলাই ক্লাস শুরু হবে। সেই ১০দিন চার দিন আগে শেষ হলেও গতকাল পর্যন্ত স্কুল খুলেনি। কিন্তু কেন? এমন প্রশ্নে তিনি কর্পোরেট অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আমিনা রতœা বলেন, আমার সন্তান ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলে পড়ে। গত মাসের ১৮ তারিখের পর ২৫ তারিখ স্কুল খোলার কথা থাকলেও এখনো খোলা হয়নি। গুলশান হামলায় সন্তানের শিক্ষাজীবন নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এক মাস আগে নতুন বছরের শুরু হলেও গতকাল পর্যন্ত স্কুলই খুলতে পারেনি। সিলেবাস হাতে পায়নি। তিনি জানান, কয়েকটি স্কুল খুলেছে বলে আমি শুনেছি। কিন্তু সেখানে ক্লাস হচ্ছে না। তাহলে খোলা আর বন্ধের মধ্যে পার্থক্য কী? তিনি বলেন, সরকার আমাদের নিরাপত্তা বিষয়টি না দেখলে ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, স্কুলে ক্লাস হচ্ছে না। কিন্তু বেতন দিতে হচ্ছে। এতে সবদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বন্ধ থাকা স্কুলগুলোতে দ্রুত ক্লাস চালু করা দরকার।
ম্যাপলিপ স্কুলের প্রিন্সপাল জেবা আলী বলেন, আমরা স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে জঙ্গি হামলার ঘটনার কারণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটিও বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাচ্চাদের ব্যাগও চেক করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত