সৌদি আরবে চাকরিচ্যুত বাংলাদেশি শ্রমিকরা ভারতের শ্রমিকদের খাবার ভাগ করে খাচ্ছেন
বিশ্বজিৎ দত্ত : সৌদি আরবে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ভারত ও পাকিস্তান দূতাবাস দেশে ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত খাবার ও অন্যান্য সহযোগিতা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর পক্ষে তার একান্ত সচিব ইয়াসিন আদনান জানান, আমাদের কাছে বেকার হওয়ার নিয়মিত তথ্য রয়েছে কিন্তু দূতাবাস থেকে তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে এ ধরনের তথ্য নেই। অন্যদিকে ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে, ভারতীয় দূতাবাস তাদের শ্রমিকদের যে খাবার দিচ্ছে তা বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। গতকাল বিবিসি বাংলাকে সৌদি রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ জানান, একটি কোম্পানির ২ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। তাতে শ্রমবাজারের কোনো সমস্যা হবে না। ২০ বছর চাকরি করার পর একজন শ্রমিক সাময়িক বেকার হতে পারেন। আমরা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায়ের চেষ্টা করছি। আমরা তাদের খাবার সরবরাহ করছি ও তাদের কর্মস্থল পরিবর্তনের প্রস্তাবও করা হয়েছে। সৌদি আরবে অর্থনৈতিক মন্দার ফলে হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অনেক শ্রমিক এখন বেকার রয়েছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা যাতে চাকরি করতে পারেন বা দেশত্যাগ করতে পারেন সে লক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলের একটি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শ্রমিক গত ৭ মাস যাবত বেকার রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৪৪ জন বাংলাদেশি। কিভাবে এখন তারা দিন কাটাচ্ছেন? তাদের একজন মিজানুর রহমান বিবিসির সাংবাদিককে বলেছেন, আমরা এখানে ভারত, পাকিস্তানি, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার দেশগুলোর মানুষ একসাথে আছি। আমরা একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। তিনি আরও বলেন, এক বছর আগে শুনেছিলাম, এই কোম্পানির লাইন্সেস বাতিল হয়ে গেছে। তারপর আস্তে আস্তে আমাদের বেতন বন্ধ হতে শুরু করল। শেষ ৬ মাস আমরা বেতন পাইনি এবং চলতি ৪ মাস কোনো কাজ নেই, সাথে কোনো খাওয়াও নেই। গত ৪ মাস ধরে কোম্পানিটি খাবারের টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। আপনারা এই অবস্থায় কিভাবে দিন কাটাচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এখানে একটা ইসলামিক দাওয়াত সেন্টার আছে, সেখান থেকে আমাদের খাবার দেওয়া হতো রমজান মাসে। রমজান মাসের আগে এ রকম আরও একটা কোম্পানি আমাদের সাহায্য করেছিল। তখন তারা আমাদের চাল, ডাল, ইত্যাদি কিনে দিয়েছিল। ওই খাবার আমার এখনো খাচ্ছি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের অবস্থা করুণ। কারণ ওই খাবারগুলোও প্রায় শেষ এবং কারও কাছে কোনো টাকাও নেই। এমনকি, আমরা সৌদি সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে অনেকবার এই বিষয় নিয়ে কথা বলেছি কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় আমারা বাইরে কোনো কাজেও যেতে পারছি না। আমরা আপাতত ১ বেলা খেয়ে আছি। ভারতের কিছু কোম্পানি তাদের দেশের লোকদের সাহায্য করছে। ওই খাবার আমরা সবাই মিলে খেতে পারছি। আপনাদের কি দেশে ফিরে আসতে হবে? আর আসলেই বা কিভাবে আসবেন? জবাবে মিজানুর রহমান বলেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে যদি কোনে মন্ত্রী বা বড় মাপের কোনো মানুষ যদি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো একটা কিছু হবে। এমনও হতে পারে যে তাদের কারণে আমরা অন্য কোনো কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগও পেতে পারি। যদিও জায়গা পরিবর্তন করতে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাগে এই টাকাটা কে দিবে সেটাও ভাবার বিষয়। কারণ, আমাদের কারও কাছে কোনো টাকা নেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সৌদি আরবে ভারতীয় শ্রমিকদের নিয়মিত সহায়তা ও খাবার দেওয়ার জন্য সেদেশের রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি দেখভালের জন্য সৌদি আরবে রয়েছেন।