দীপক চৌধুরী : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনেপ্রাণে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক মানুষ, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ। সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করতেন তিনি। এক অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও মানুষের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন বলে তার কারণেই ’৭১-এ ভিন্ন দল-মত-পথের মানুষরা সংযুক্ত হয়েছিল তার ডাকে, তার নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে দেশের আবহমান সাংস্কৃতিক ধারার মূলে কুঠারাঘাত করা হয়Ñ তেমনি বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটানো হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলামের লেখা এবং অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর হাতের দলিল’ গ্রন্থ পাঠ করা হলে কিছু উপলব্ধি করা যায়Ñ বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে।
আজকের জঙ্গিবাদ, জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস সারাবিশ্বের সমস্যা হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব বা এর উপস্থিতি থাকার কথা ছিল না। উচ্চস্বরে এ সরকারকে বলতে হচ্ছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজ বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেমন বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল, তেমনি ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি সন্ত্রাস নির্মূল করবে।
এখন প্রমাণিত সত্য যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর গণসংস্কৃতির বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ ঘৃণ্য হত্যাকা-ের পর সামরিক শাসন জারি ও যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে, ছড়ানো হয়। মোটকথা পুরো দেশের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল।
বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির ধারাটি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিলীন করা হয়েছিল। সেই ধারা হাজার বছর ধরে এই ভূখ-ের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে এক সুতায় বেঁধে রেখেছিল। আর ওই ধারাকে উপড়ে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয় ও সাংস্কৃতিক অপঘাত। এ হত্যাকা- গণসংস্কৃতির বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কিছুদিনের জন্য। তখন যেমন এ নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ রাজনৈতিকভাবে হয়নি, তেমনি সাংস্কৃতিক কর্মীরাও কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। আর শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিকভাবেও পিছিয়ে পড়ে পুরো বাঙালি জাতি। বাঙালিকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর সেনাশাসনের কারণে সংস্কৃতিচর্চ্চা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঞ্চ নাটক, যাত্রাসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। বেতার ও টেলিভিশনে পাকিস্তানি হানাদার ভাষার উপর দাঁড়িয়ে আমাদের যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উšে§ষ ঘটেছিল সেটিতে আঘাত করা হয় নারকীয় এ হত্যাকা-ের পরে।