দিল ধারাকনে দো
এ ব্যাপারে বামরা বেশ ভালো অবস্থানে আছেন। উনাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। ‘রামপাল হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্থ হবে, সো রামপাল চাই না।’ এরপরে? এরপরের অংশে তারা নীরব। অন্য কোথাও হলে চলবে? কোন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়? উত্তর নেই। আপত্তিটা কিসে? রামপালের ভৌগলিক অবস্থানে? না কয়লায়? উত্তর নেই। চুক্তির বিভিন্ন পয়েন্টে? অন্য কোনো অপশান? অন্য কেউ এর চেয়ে ভালো শর্তে চুক্তি করতে কি আগ্রহী? উত্তর নেই। এদেশের বামপন্থিদের মূল সমস্যা এখানেই। এরা চিল্লাপাল্লা করতে পারে, কিন্তু সমাধান দিতে পারে না। এবারও তেমন কোনো কংক্রিট সমাধান ওদের কাছে নেই। একটা উত্তর অবশ্য ইদানিং আমদানি করেছে, ‘রিনিউয়েবল এনার্জি’।
ব্যাপারটা একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে দেখে সম্প্রতি অবশ্য উনারা নতুন ভাঁড়ামি শুরু করেছেন, ‘গণভোট’। হোয়াট অ্যান অরিজিনাল আইডিয়া। আসলে বেচারাদের মাথা থেকে এখনও ‘ব্রেক্সিট’ ফিভার নামেনি। সোভিয়েতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এরা এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গেছে যে, ধার করা কোনো সমাধান ছাড়া এদের মাথায় আর কিছু আসে না। সোভিয়েত নেই, বুদ্ধি পাবে কোথায়? হাতের কাছে পাওয়া গেছে ব্রেক্সিট, তা-ই সই। আচ্ছা, সাম্প্রতিক ঢাকার উত্তর আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দাঁড়িয়েও কি উনাদের শিক্ষা হয়নি? ভোট কিভাবে হয়, আর রেজাল্ট কিভাবে হয়? কতটা দেওয়া যায়? আর কতটা নিয়ে নেওয়া হয়? এনিওয়ে, এতদিনে যেহেতু তাদের ঘটে বুদ্ধি গজায়নি, এখন আর আশা করাটাও ঠিক হবে না।
এবার বরং দৃষ্টি দিই আওয়ামী ফেসবুকারদের দিকে। লীগ ফেসবুকাররা আসলে দুইভাগে বিভক্ত। একটার নাম ‘সুশীল সমাজ’ আর অন্যটা ‘অন্ধ লীগার’। সুশীল সমাজ গ্রুপটা আছে মহা সমস্যায়। এখন যেহেতু ফ্যাশান চলছে রামপাল বিরোধিতার, তাই সেদিকে যেতেই উনাদের মন চাইছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রজেক্টটা আবার আওয়ামীদের। সো, বিরুদ্ধে বলাও সমস্যা। পেটে লাথি পড়বে। বিদেশ যাত্রার লিস্ট থেকে নাম কাটা পড়বে। সো, মৃদুস্বরে, ‘আমরা উন্নতির বিপক্ষে নই, কিন্তু সুন্দরবনের ক্ষতি… ব্লা ব্লা ব্লা’।
‘দলান্ধ লীগ’ এদিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। এদের নিজেদের চিন্তা করার তেমন মুরোদ নেই। নেত্রী যা বলবেন, সেটাই অমোঘ বাণী। এর ওপর ধ্রুব সত্য বলে আর কিছু নেই। নেত্রী বলতে ইনারা অজ্ঞান। ‘নেত্রীর চেয়ে আপনারা বেশি বোঝেন?’ সো, নেত্রী যখন এই প্রকল্পে ‘গো অ্যাহেড’ দিয়েছেন, তাই এখন থেকে ‘রামপাল ইজ ইক্যুয়াল টু চেতনা’। এর বিরোধিতাকারী আসলে ‘চৈনিক দালাল’ কিংবা… না, এখনও ওরা মুক্তিযুদ্ধকে টানেনি।
‘রাজাকারের দোসর’ কিংবা ‘নব্য রাজাকার’ তকমা এখনও আসেনি। তবে আসবে। কণ্ঠস্বর কর্কশ হতে শুরু করেছে। ‘চ’ বর্গীয় গালিগালাজ আসতে শুরু করেছে। ব্লগার আর ফেসবুকারদের মধ্যে নীতি নির্ধারণী ক্যাচাল শুরু হয়ে গেছে। অচিরেই সম্ভবত লীগ বাহিনী কোমর বেঁধে নেমে পড়বে… সারাংশ হবে, ‘রামপাল জায়েজ’ আর ‘এর বিরোধিতা কারীরা…’ ‘সামাঝদারকে লিয়ে ইশারাই কাফি’। হিন্দি তো বোঝেনই, তাই না?
বিএনপি কিংবা জামায়াত নিয়ে কি কিছু বলব? আচ্ছা বলি। না হলে, আবার বলবেন…। এ ব্যাপারে আসলে ওদের তেমন কোনো বক্তব্য নেই। বা বলা যায়, লন্ডন এখন এসব নিয়ে ভাবছে না। নেত্রী ইলেকশান করতে পারবে কি না, কিংবা রাজপুত্রের কেসের কি হবে, এই হচ্ছে আপাতত উনাদের হেডেক। ভারত ইনভল্ভ থাকায় হয়তো কিছু নাখোশ ভাব আছে, তবে সেটা বলার জন্য কোনো ‘মুখপাত্র’ জেলে যেতে রাজি না। সো, আপাতত ‘ওরা যে জঙ্গি তার প্রমাণ কী?’ মার্কা কথাবার্তা নিয়েই উনারা আছেন। মাঝে মাঝে ‘জামায়াত সঙ্গ পরিত্যাগ’ মার্কা কিছু বচন আসছে। অ্যান্ড ফুলস্টপ।
সো, এই হচ্ছে গত কয়েকদিনের ফেসবুকিংয়ের সারাংশ। কি বুঝলেন? দেশের উত্তরাঞ্চলে যে বন্যা হচ্ছে, সে খবর কি উনারা রাখেন? চিনির দাম যে হঠাৎ দশ টাকার মতো বেড়েছে, সে খবর ফেসবুকে পাবেন? মজা এখানেই। এই ফেসবুকাররা হচ্ছে অদ্ভুত এক প্রজাতি। ট্রাম্পের স্ত্রীর নগ্ন ছবি নিয়ে নাতিদীর্ঘ স্ট্যাটাস দেওয়ার সময় ইনাদের আছে।
‘হিলারি না ট্রাম্প’ এই নিয়ে বিতর্কেও এদের বিরাম নেই। তুরস্কের ক্যু নিয়েও এরা চিন্তিত। শুধু খবর নেই দেশের। দোষ কি শুধু ওদের? আমিই বা কি করলাম? সেই রামপাল নিয়েই তো ঘ্যান ঘ্যান করলাম। শেষে এসে খানিকটা বিবেক উগড়ালাম। ‘দিল ধারাকনে দো’ টাইপ একটা কনক্লুশান। সবাইকে বোঝানো হয়ে গেল, ওদের জন্য আমারও মন কাঁদে। ব্যাস, ওতেই হবে।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন