সব বাবা-মা হোক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা-মা
সন্তান হলো আল্লাহর রহমত, নর-নারীর ভালোবাসার ফসল। একটি সন্তান জন্ম দেওয়া যেমন সহজ নয়, তেমনি তাকে এই পৃথিবীর আলোয়-ছায়ায় বড় করে তোলা, মানুষের মতো মানুষ করে তোলাও সহজ কথা নয়। আর এই জন্যই পৃথিবতে সফল ও যোগ্য পিতা-মাতা হওয়া অনেক বেশি কষ্টসাধ্য। প্রতিটি পিতা-মাতার কাছে তাদের সন্তান অমূল্য সম্পদ। সন্তানকে ঘিরেই বুনিত হতে থাকে পিতা-মাতার সব স্বপ্ন। বলা হয়ে থাকে, একটি শিশু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় সে তার বাবা-মায়ের ভাষা বুঝতে শুরু করে।
পৃথিবী নামক কঠিন পাঠশালায় জন্মের পর থেকেই শিশুর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এই কঠিন পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হয় বাবা-মায়ের কাছ থেকে তথা পরিবার থেকে। শিশুরাই একটি দেশ, সমাজ ও জাতির ভবিষ্যত গড়ার কারিগর তথা কর্ণধার। এই সত্যটিকে উপলব্ধি করে একটি শিশুকে জাতীয় জীবনের জন্য গড়ে তোলা পরিবার তথা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব। উন্নত বিশ্বে জাতি গড়ার এই মহান দায়িত্ব পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্র তথা সমাজব্যবস্থা সমানভাবে ভাগ করে নেয়। কিন্তু আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে জাতি গড়ার এ মহান দায়িত্ব ন্যস্ত হয় বাবা-মা ও পরিবারের ওপর। এ কারণেই সন্তান জন্মের আগেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে সন্তান লালনের বিষয়ে বাবা-মায়ের প্রস্তুতি নেওয়া অত্যাবশ্যক। গতিময় এই কর্মব্যস্ত জীবনে ব্যস্ততার অজুহাতে এই বিষয়ে গাফিলতি একেবারেই ঠিক নয়। এই সত্যটি রাষ্ট্রীয়ভাবে উপলব্ধি করে কর্মজীবী বাবা মায়েদের জন্য মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন সুযোগ সুবিধা কিভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে এখনি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বিশেষ করে যে সকল পিতা-মাতা সেবামূলক পেশায় নিয়োজিত যেমনÑ ডাক্তার, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি পেশার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন সুযোগ সুবিধা নির্ধারণ করা। এই সকল পেশার বাবা-মায়েরা পেশাগত কারণে সন্তানদের সময়ই দিতে পারেন না। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে সকল কর্মজীবীদের কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই কঠোর শ্রমই কী জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই খুজেঁ পাওয়া যায়। সন্তান পড়াশোনায় ভালো করুক এই জন্য সকল পিতা-মাতার সব ধরনের প্রস্তুতি চলে কিন্তু চারিত্রিক উন্নয়ন সাধন করে তাকে একটি জাতির জন্য তৈরি করার প্রচেষ্টা একেবারেই চোখে পড়ে না।
সোনার মানুষ গড়ার জন্য প্রয়োজন কঠোর সাধনা। অথচ সফল পিতা-মাতা কি করে হতে হয় অধিকাংশ মানুষই তা জানেন না বা জানলেও অনুসরণ করেন না অথবা পেশাগত ব্যস্ততা কিংবা রাষ্ট্রীয় দুষ্ট নিয়ম-কানুনের চক্রে পড়ে নিজের সন্তানের ওপর তার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন না। ফলে আজকের সমাজে যা হবার তাই হচ্ছে।
সন্তানদের সঙ্গে বাবা- মায়ের দূরত্ব বাড়ছে, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে, সন্তানরা বিপথগামী হচ্ছে, পরিবার তথা সমাজের মানসিক যন্ত্রণা ও দ্বন্দ্ব বাড়ছে। ইতর পশুপাখির বাচ্চা জন্ম নিয়েই দৌড়ায়। কিন্তু মানবসন্তানকে কঠোর শ্রম ও সাধনার মাধ্যমে পৃথিবীর বন্ধুর পথে হাঁটতে-দৌড়াতে শিখাতে হয়। তার এই কঠিন শিক্ষার সহযোগী হতে পারলেই সকল সন্তানের কাছে তার পিতা-মাতা হবে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা-মা।
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট/ সম্পাদনা : জব্বার হোসেন