আর সময় নষ্ট নয়
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে জঙ্গি মতাদর্শের রাজনৈতিক দলসমূহকে নিয়ে রাজনীতি করার একটি বড় কারণ ভোটব্যাংকের রাজনীতি। ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প শুরু করেছিল, তার অন্যতম ছিলেন জিয়াউর রহমান। তার হাত ধরেই পাকিস্তানি নাগরিক, রাজাকার শিরোমনি গোলাম আজমের দেশে প্রত্যাবর্তন, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ, জামায়াতে ইসলামীসহ স্বাধীনতাবিরোধি রাজনৈতিক শক্তির স্বগৌরবে ফিরে আসা।
সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থসিদ্ধি কীভাবে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে তার শুরু বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুরষ্কৃত করার মধ্য দিয়ে। সেটাও করেছিলেন জিয়াউর রহমান। এক নতুন রাজনীতি দেখতে শুরু করে মানুষ আর তা হলো ধর্মীয় আবেগকে উস্কে দিয়ে অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজে রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখা। এটি জিয়া করেছেন, এরশাদ করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া করেছেন এবং শেখ হাসিনাও ক্ষেত্র বিশেষে আপোষ করেছেন। জনতার আবেগের দোহাই দিয়ে বারবার আইনের শাসনে অন্তর্ঘাত ঘটানো হয়েছ্।ে যার ফলে আইনি ব্যবস্থার উপরেই ভরসা চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারই হাত ধরে আজ জঙ্গি ও সন্ত্রাসের ছায়া সর্বত্র। ধর্মীয় আবেগের পরিকল্পিত ও সংগঠিত বিস্ফোরণই আজকের জঙ্গিবাদ।
মুসলিম মানসিকতাকে তোষণের নামে রাজনৈতিক ইসলামের গণহত্যাকারী জঙ্গি জেহাদিদের অপরাধ মার্জনা করার সংস্কৃতি আমাদের আজ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটা কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারছে। তথাকথিত জেহাদিদের মৌলবাদী জঙ্গিরা সাধারণ মুসলিম জনতা সমর্থন করে না একথা ঠিক। কিন্তু ন্যাক্কারজনক ভোটব্যাংকের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে মৌলবাদ টিকিয়ে রাখে রাজনৈতিক শক্তি।
প্রধানমন্ত্রী বারবার ধর্মের সঠিক ও মানবিক ব্যাখ্যা এবং তরুণদের সুশিক্ষা ও পারিবারিক বন্ধনের বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি পালন করছে। জেগে উঠতে শুরু করেছে সমাজ। গত দুবছরে অনেকগুলো জঙ্গি ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতটা তৎপরতা দেখায়নি যতটা গুলশান হামলার পর দেখাচ্ছে। মানুষের মনে আস্থাও ফিরিয়ে আনতে পেরেছে নিজেদের সক্ষমতার ব্যাপারে কল্যাণপুরে ৯ জঙ্গিকে খতমের মাধ্যমে। উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে জাকির নায়েকের ‘পিস টিভি’ বন্ধ করা হয়েছে। একই মতাদর্শের পিস স্কুলও বন্ধ করা হয়েছে। গুটি কয়েক সামাজিক মাধ্যম ভ্রমণকারী অর্ধশিক্ষিত ছাড়া জনগণ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এ সবই সুলক্ষণ। তবে এটা যথেষ্ট নয়। আমাদের নিরাপত্তার সামর্থ আরও বাড়াতে হবে। মানুষের মনে যে ‘সেন্স অব ইন সিকিউরিটি’ তৈরি হয়েছে তা দূর করতে আরও পরিকল্পিত উদ্যোগ দরকার। আমরা অনেক সময় নষ্ট করেছি, আর নয়।
লেখক : পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন