আজাদ হোসেন সুমন : জামিনে মুক্তি পেয়ে জঙ্গি নেতারা পুনরায় সংগঠিত হচ্ছেন। আত্মগোপনে থেকে তারা বিভিন্ন জঙ্গি প্রশিক্ষণ এবং নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু তখন পুলিশের আর কিছুই করার থাকে না। ততদিনে জঙ্গিরা চলে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। জামিন নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়া জঙ্গিদের নিয়েই পুলিশ-র্যাব উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হরকাতুল জেহাদের অর্থসংগ্রহকারী ও সমন্বয়কারী মওলানা মহিউদ্দিনকে প্রায় ২ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে গ্রেফতার করা হয়। বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আধিপত্য বিস্তার করার একপর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু গত বছর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের শীর্ষ এই নেতা জামিনে মুক্তি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। জেএমবির শীর্ষ নেতা আনিসুজ্জামান ২০০৭ সালে জামিন নিয়ে লাপাত্তা। মুফতি হান্নানের সহযোগী মাওলানা ইদ্রিস আলী ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। তিনি দেশেই পালিয়ে আছেন। হুজির মাওলানা আবদুল লতিফ ২০১০ সালের ২৮ আগস্ট মুক্ত হন। জেএমবির সাখাওয়াত হোসেন ওরফে দুলাল ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতে পালিয়ে যান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি মাওলানা আকবর হোসেন ওরফে হেলাল উদ্দিন ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট জামিনে মুক্ত হন। তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান। মাওলানা আশরাফুল ইসলাম ২০১২ সালের ৭ মে জামিনে মুক্ত হন। তিনি দেশেই আছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা আইনের ফোকর গলে জামিন নিয়ে সহজেই বেরিয়ে যান। এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ দেশের ভেতরেই ঘাপটি মেরে আছেন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, এরা দেশের ভেতরে এবং বাইরে থেকে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত আছে। এদের কেউ প্রশিক্ষণ বিষয়ে, কেউ অর্থসংগ্রহ আবার কেউ নাশকতা বাস্তবায়নে ছক আঁটছেন।
জঙ্গিদের সহজেই জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারের শীর্ষ নীতি নির্ধারক মহলকেও ভাবিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জঙ্গিদের জামিন বিষয়ে আরও কঠোর হওয়ার জন্য বিচারকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন । এছাড়া জঙ্গিদের মামলা দেখভালে মন্ত্রণালয়ে আলাদা সেল গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, ওয়ান্টেড কাউকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়। জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে গিয়ে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। কিন্তু যখন ওই পুলিশ সদস্য দেখেন, ধরাপড়া চিহ্নিত জঙ্গি মাত্র ক’দিনের মাথায়ই জামিনে বেরিয়ে গেছেন, তখন তারা অনেকটা হতাশ হন। সম্পাদনা: এম আলম