ট্যুারিস্ট ভিসায় এসে রেস্তোরাঁয় কাজ করছিলেন ৪৪ নেপালি
মাসুদ আলম : রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস- থেকে অবৈধভাবে বসবাসকারী ৪৪ নেপালিকে আটক করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। শুক্রবার সকালে ৭নং সড়কের ১০৬০ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। সাত তলা ভবনটির বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকতেন তারা। বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় দুই শিফটে কাজ করতেন তারা। এ ঘটনায় ওয়ালিউল্লাহসহ দুই বাংলাদেশিকে আটক করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকির জানান, গত ২২ মে ডিওএইচএস’র বাসাটি আটক নেপালিদের জন্য ভাড়া নেয় ওয়ালিউল্লাহ নামে এক আদম ব্যবসায়ী। গত ২ মে বাংলাদেশে আসেন তারা। এরা সবাই পর্যটক ভিসায় বাংলাদেশে এসে রেস্তোরাঁ ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে শুরু করে। ওই বাসাটিতে ৪৭ নেপালি থাকতো। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার তিন নেপালি দেশে চলে যায়। বাকি ৪৪ জনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২৯ জুলাই । তাই তারা দেশে ফিরে যায়নি। এই নেপালিদের সবাই পুরুষ। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা আর দেশে ফিরে যায়নি বা কাজের জন্য কোনো ভিসার আবেদনও করেননি। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আটককৃত ৪৪ নেপালিকে পুশব্যাক করা হবে। যদি ফেরত না পাঠানো যায়, তাহলে ফরেন অ্যাক্টে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। নেপালি নাগরিকদের আটকের পর ওই বাসাতেই রাখা হয়েছে। নেপালি অ্যাম্বাসিতে জানানো হয়েছে। তারা আসলেই এ বিষয়ে আইনুযায়ী সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া আর কোনও বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মিরপুরে ডিওএইচএস পরিষদের কর্মকর্তা কাজী এলেম হোসেন জানান, নেপালিদের সব তথ্য বাড়ির মালিক পুলিশকে দিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়াতেই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদ ওই এলাকা থেকে সব মেস-বাসার ভাড়াটিয়াদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার জন্য বাড়িওয়ালাদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করে। এরপর গত ২৯ জুলাই ডিওএইচএস ৭ নম্বর সড়কের ১০৬০ নম্বর বাসার মালিক ব্রি. জে. (অব.) আশরাফুল ইসলাম খান তার বাসা থেকে ৪৭ নেপালিকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ১ আগস্ট তারা বাসা না ছেড়ে যাওয়ায় বাড়ির মালিক বিষয়টি পরিষদকে ফের জানান। ডিওএইচএস পরিষদ বিষয়টি পল্লবী থানাকে জানায়। এরপরই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পল্লবী থানা পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার তিন নেপালি চলে যান। তাদের তিনজনের ভিসার মেয়াদ থাকায় তারা যেতে পেরেছেন বলে পুলিশ জানায়।
কেয়ারটেকার জালাল মিয়া বলেন, গত ২ মে তারা বাংলাদেশে আসেন। ২২ মে একটি বাসে করে ডিওএইচএস গেটে নেমে পায়ে হেঁটে এই বাসায় আসেন। ওয়ালিউল্লাহ নামে এক ব্যক্তি এই বাসাটি আমার স্যারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। তাদের সব কাগজপত্র স্যারের কাছে দেওয়া আছে। তবে ডিওএইচএস পরিষদ মেস-বাসা ভাড়া না দেওয়ার অনুরোধ করলে, স্যার মেস-বাসা তুলে দেন। নেপালিদের সবাইকে গত ২৯ জুলাই চলে বাসা ছেড়ে যেতে বলেন। তাদের ১ আগস্ট চলে যাওয়ার কথা থাকলেও যাননি। কারণ তাদের কারো ভিসার মেয়াদ নেই। গত জুলাই মাসে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিনজনের মেয়াদ থাকায় তারা গতকাল বৃহস্পতিবার চলে যান। বাকিরা এখানেই আছেন। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ আসে।
জালাল মিয়া আরও বলেন, নেপালিরা হিন্দি ও উর্দুতে কথা বলে। আমি তাদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলতাম। আমি উর্দু একটু একটু পারি। শুনছি বনানীর একটি ক্লাবে তারা কাজ করে। গত কয়েকদিন ধরে তারা সেখানে যাচ্ছে না। ওয়ালিউল্লাহর বাড়ি কুমিল্লাতে। সেই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছে স্যারের কাছ থেকে। তবে কত টাকা ভাড়া তাও জানি না।
ওই বাড়িটির পাশের বাড়ির বাসিন্দা সুমন বলেন, ওরা মাঝে মাঝে সিগারেট খেতে রাস্তায় বের হতো। তখন হিন্দিতে কথা বলতো। বাসাটির সামনে থাকা মোবাইল রিচার্জের একটি দোকানের মালিক জাহিদ বলেন, ওরা আমার দোকান থেকে এয়ারটেলের কার্ড কিনতো এবং হিন্দিতে কথা বলতো। ওদের সঙ্গে কয়েকজন বাঙালিও থাকতো। বাড়িটির মালিক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আশরাফুল ইসলাম।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা সোয়া দুই লাখের মতো। এর বাইরে প্রায় ১০ হাজার বিদেশি ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে পুলিশের তথ্য।
নাইজেরিয়া, উগান্ডা, ঘানা, আলজেরিয়া, ক্যামেরুন ও লাইবেরিয়ার মতো আফ্রিকান দেশ থেকে আসা অনেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন অপরাধমূল কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৪ সালে তালিকা করে অভিযান শুরু উদ্যোগ নেন গোয়েন্দারা। সে সময় শতাধিক বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। বিদেশি নাগরিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের একটি বড় অংশ খেলোয়াড় হিসেবে অথবা স্টুডেন্ট ভিসায় এ দেশে এসে আর ফিরে যাননি।
সম্পাদনা: এএইচসি