ফেসবুক ফ্রেন্ড, কেমন ফ্রেন্ড?
৭ আগস্ট বিশ্ব বন্ধু দিবস। এমন একটা সময় ছিল স্কুল জীবনের বন্ধুদের বন্ধু মনে করতাম। তাদের ব্যথায় ব্যথিত হতাম। তাদের আনন্দে আনন্দিত হতাম। আজ সেটা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন সারা পৃথিবীতে ফেসবুক ফ্রেন্ডের প্রকৃত ফ্রেন্ড বা বন্ধু মনে করা হচ্ছে। মজার ব্যাপার এই যে, ফেসবুক ফ্রেন্ডরা কোনো কারণ দর্শানো ব্যতীত যেকোনো মুহূর্তে আপনাকে আনফ্রেন্ড করবেন। এর কোনো ব্যাখ্যা তারা দিবেন না। যেকোনো বিরুপ মন্তব্য ফেসবুক বন্ধুরা করে বসেন। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন না। যে লক্ষ্য নিয়ে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন সে লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু এই ফেসবুকের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় হানাহানিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অশশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরকীয়াকে স্বাভাবিক মনে করা হচ্ছে। কিন্তু ফেসবুক এর লক্ষ্য তা না। ফেসবুকের মূল লক্ষ্য ছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। সারা পৃথিবীতে ফেসবুকের কল্যাণে আপনি বন্ধু পেয়ে যাচ্ছেন। ওই বন্ধুরা আপনার সঙ্গে সুখ-দুঃখ শেয়ার করছেন। কিন্তু আপনার স্কুল জীবনের সে বন্ধু, যে হয়তো গ্রামের কোনো নির্জনে বসবাস করছে, অথবা অনেক দূরে চলে গেছে। সে বন্ধুর কথা আমরা সবাই ভুলে গেছি। আপনার বাল্য বন্ধুরা কোনোদিনই আপনাকে, আমাকে আনফ্রেন্ড করবে না। এমন কিছু করবে না যাতে আমি, আপনি ব্যথিত হই। কিন্তু ফেসবুক বন্ধুরা এসব ভাবনা চিন্তা করবে না, কারণ আপনার মানসিক অবস্থা বোঝার মতো মানসিকতা তার নেই। বিশ্ব বন্ধু দিবসের লক্ষ্য হওয়া উচিত, বিশ্বের সকল ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের মানুষকে বন্ধু মনে করা। শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করা, যদি শত্রুকে বন্ধু বানাতে পারেন আপনার মনোবল বেড়ে যাবে। ধর্মীয় হানাহানি বন্ধ হয়ে যাবে। ফেসবুক বন্ধুরা আপনার মনে আঘাত দিয়ে যেকোনো মন্তব্য করে বসেন। কিন্তু আপনার বাল্যবন্ধুরা সে কাজটি কোনোদিনই করবেন না। বিশ্ব বন্ধু দিবসে আপনার হারানো বন্ধুকে খুঁজে বেড়ান। নিশ্চয়ই পেয়ে যাবেন। প্রতিটি দেশের সঙ্গে, যে সকল দেশের সঙ্গে আমাদের তিক্ততা রয়েছে তাদের সঙ্গেও আমাদের বন্ধুত্বের প্রয়োজন। বন্ধু ছাড়া আমি, আপনি, সারা পৃথিবী অচল। যার যত বন্ধু তিনি তত মনোবলের অধিকারী। একজন মানুষ যখন একাকী থাকেন, তখন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা তাকে পরামর্শ দেন বন্দুদের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে। পৃথিবীর সকল নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে আমরা বন্ধুর মর্যাদা রাখতে পারি। সারা দেশে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বন্ধুত্বের নমুনা দেখানো প্রয়োজন। বাংলাদেশকে নিয়ে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা ব্যর্থ হয়ে যাবেন, আমরা যদি বিশ্ববাসীকে বন্ধু হিসেবে কাছে পেয়ে যাই।
লেখক : কলামিস্ট / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন